‘তেল প্যাকেজের’ সঙ্গে জড়িত নয় কোম্পানিগুলো, দাবি প্রতিনিধিদের

তেল নিতে চাইলে চা পাতা, চিনি, পোলাওয়ের চাল নিতে হবে এমন শর্তের কোনো নির্দেশনা কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি বলে দাবি ভোজ্য তেল সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় কোম্পানির প্রতিনিধিরা এমন দাবি করেন।
মতবিনিময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, তেল নিতে চাইলে চা পাতা, চিনি, পোলাওয়ের চাল নিতে এমন শর্ত যারা জুড়ে দিতে প্যাকেজ আকারে তেল বিক্রি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহ থেকে অভিযানে নামা হচ্ছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় অংশ নিয়ে সিটি গ্রুপের হেড অফ সেলস ফরহাদ হোসেন বলেন, তেলের সঙ্গে অন্য কিছু নিতে হবে ক্রেতাকে এমন কোনো নির্দেশনা আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। তাই তেল কিনতে হলে ক্রেতাকে চা পাতা, পোলাওয়ের চাল, চিনি এসব নিতে ক্রেতাকে বাধ্য করার সঙ্গে আমরা কোনভাবেই জড়িত নই।
একইভাবে টি কে গ্রুপের হেড অফ বিজনেস আব্দুল চৌধুরী বলেন, তেলের সঙ্গে অন্য কিছু ক্রেতাকে নিতে হবে এই নির্দেশনা আমাদের পক্ষ থেকে কাউকে দেয়া হয়নি। বরং আমরা আমাদের ডিলার, ডিসট্রিবিউটর সবার কাছে কোম্পানির পক্ষ থেকে চিঠি ইস্যু করেছি যেন কোনভাবেই এমনটি করা না হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (হেড অফ সেলস ব্লাক অ্যান্ড রিটেইল) রিদওয়ান রহমান বলেন, তেলের সঙ্গে আটা, ময়দা, চা পাতা এমন কোনো প্যাকেজ বা শর্ত আমাদের পক্ষ থেকে ছিল না। যদি কোনো রিটেইলার গোপনে এমন করে থাকে তাহলে আমাদের জানান আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
রূপচাঁদার জেনারেল ম্যানেজার (ফিন্যান্স অ্যান্ড একাউন্স) দাবিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকেও এমন কোনো প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়নি।
একইভাবে মেঘনাসহ অন্যান্য গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিরাও জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে তেলে সঙ্গে অন্য কিছু নিতে হবে বলে এমন কোন শর্ত দেয়া হয়নি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কারওয়ান বাজার ব্যবসায়ীদের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, যখন বলা হয়েছে প্যাকেজ করে তেল কিনতে হবে। তখন বিপদে পড়েছে ছোট ব্যবসায়ীরা কারণ তাদের পুঁজি কম। যখন সেই দোকানিকে তেলের সঙ্গে চা পাতা, চিনি, আটা, ময়দা, চাল নিতে বাধ্য করা হয়েছে তখন ওই ছোট দোকানি বুঝেছে যে তার বাকি পণ্য ২/৩ মাসেও বিক্রি হবে না। তবুও তার মূলধন আটকে গেল। এখন সেই দোকানি মূলধন আটকে যাওয়ার ঘাটতি কমাতে তেল বিক্রির সময় ক্রেতাদের কাছে থেকে বেশি দাম নিতে বাধ্য হয়েছে। এজন্য ডিলারদের জন্যও একটি নীতিমালা থাকতে হবে। ঈদের আগের মজুত রাখা তেলে নতুন রেট বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। আগেই যখন তেলের দাম বাড়ার খবর পেয়ে যাচ্ছে তখন যেই দোকানে লাগবে ৩০ বোতল তেল লাগবে, সেই দোকানি ১০০ বোতল তেল মজুত করে রাখছে। ফলে ক্রাইসিস বাড়ছে। এ জন্য দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আগে থেকে গোপন থাকলে ক্রাইসিস সৃষ্টি হবে না।
আলোচনায় সব পক্ষের বক্তব্য শুনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আমরা আজ সবাইকে ডেকেছি, সবার কথা শুনেছি, সেখানে কোম্পানিগুলো বলেছে; তারা এমন প্যাকেজ আকারে শর্ত দিয়ে তেল বিক্রির নির্দেশনা দেয়নি। তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে কারা এমন তেল কিনতে চা পাতা, চিনি, পোলাওয়ের চাল কেনার শর্তে তেল বিক্রি করেছে। কারা ঈদের সময় ১৬০ টাকার তেল ২০০ টাকা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুপাট করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, এভাবে প্যাকেজ বানিয়ে ভোক্তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন করেছেন ডিলার ডিস্ট্রিবিউটররা। আমরা তাদের খুঁজে বের করব। তাদের ডিলারশিপসহ ডিস্ট্রিবিউশন করা আমরা বাতিল করব। সেই লক্ষ্যে আগামী সপ্তাহ থেকে আমাদের অভিযান শুরু হবে।
এএসএস/এসএম