মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে

প্রতিটি মামলা নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মনিটরিং অব্যাহত রাখার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের শাপলা কনফারেন্স রুমে কোয়ার্টার্লি অপরাধ পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এ কথা বলেন।
আইজিপি বলেন, পুলিশের আচার-আচরণে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন এসেছে। ইতিবাচক পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা চাই, থানায় আসা সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে যেকোনো ধরনের খারাপ আচরণের কথা বাস্তব নয়, গল্প ও কল্পকথার অংশ হোক। সেটি বিবেচনায় নিয়েই কাজ করছি আমরা। জনবান্ধব পুলিশ হতে হলে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেই হবে, তাদের সহযোগিতা করতে হবে। সেবাপ্রার্থীর প্রতি সাপোর্টিভ হতে হবে। প্রতিটি মামলা নিবিড়ভাবে তদারকির মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মনিটরিং অব্যাহত রাখাতে হবে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের। এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও তদারকি বাড়াতে হবে। পেশীশক্তি নয়, বরং পুলিশের কাজে আইনি সক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে।
মাদকমুক্ত পুলিশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, মাদকের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে পুলিশের যেকোনো সদস্যের প্রতি শূন্য সহিঞ্চুতা দেখানো হচ্ছে, এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে আমরা বিট পুলিশিং চালু করেছি। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিট পুলিশিং কার্যক্রম আরও গতিশীল করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সফলভাবে বিট পুলিশিং করলে সমাজে অনেক অপরাধ কমে আসবে।
জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ও সম্পর্ক বাড়াতে হবে উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, অপরাধের সংঘটন কমাতে প্রো অ্যাকটিভ পুলিশিংয়ের পাশাপাশি প্রিভেন্টিভ পুলিশিংয়ের চর্চা বাড়াতে হবে। বিট পুলিশিং চর্চা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।
শৃঙ্খলার ব্যাপারে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আইজিপি বলেন, শৃঙ্খলার সঙ্গে কোনভাবেই আপস করা যাবে না। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী ও অন্যান্য পেশার মানুষের সঙ্গে পেশাদার সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে। পেশাদার সম্পর্ক এড়িয়ে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়। অধীনস্থদের গতিবিধি ও কাজকর্মের খোঁজখবর রাখতে হবে। যেকোনো অপরাধ মনষ্কতা শক্ত হাতে দমন করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা, সে প্রত্যাশার ব্রতী হতে হবে।
ভালো কাজ ও সদাচারণের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, এটা করতে পারলে মানুষ যুগ যুগ ধরে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
সভায় জানানো হয়, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর কোয়ার্টারে মামলা হয়েছে ৫০ হাজার ৮৫৮টি, যা গত ২০১৯ সালের একই কোয়ার্টারে ছিল ৫৩ হাজার ৬১৬টি। অর্থাৎ বর্তমান কোয়ার্টারে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মামলা কমেছে ২ হাজার ৭৫৮টি। আলোচ্য সময়ে আগের কোয়ার্টারের তুলনায় (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০) খুনের মামলা কমেছে ১২৮টি, যা মোট খুনের মামলার ১৩ দশমিক ৩৫ ভাগ। এছাড়া, উদ্ধারজনিত কারণে মামলা কমেছে। গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সূচকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সভায় দেশব্যাপী পুলিশের সব ইউনিটভিত্তিক ডাকাতি, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, অপমৃত্যু, মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার ইত্যাদি মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন, করোনা ও টিকাদান সংক্রান্ত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিট পুলিশিংও আলোচনায় উঠে এসেছে। আলোচনাকালে আইজিপি মহাসড়ক ও সংলগ্ন এলাকায় ডাকাতি রোধে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে যৌথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
সভায় পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ড. মো. নাজিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজি (এঅ্যান্ডও) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, এসবি প্রধান মীর শহীদুল ইসলাম, সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজি মো. মহসিন হোসেন, এপিবিএন’র অতিরিক্ত আইজি মো. মোশাররফ হোসেন, টিঅ্যান্ডআইএম’র অতিরিক্ত আইজি ইব্রাহিম ফাতেমী, হাইওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি (ফিনান্স) এস এম রুহুল আমিন, অতিরিক্ত আইজি মাযহারুল ইসলাম, এটিইউ’র অতিরিক্ত আইজি মো. কামরুল আহসান, ঢাকার পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরা, সব মেট্রোপলিটন কমিশনার ও রেঞ্জের ডিআইজিরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএসি/এসএসএইচ