নাগরিক অধিকার ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আলাদা কমিশনের দাবি

নাগরিক অধিকার ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আলাদা কমিশনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ নামের একটি সংগঠন।
শনিবার (৪ জুন) সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকদের জীবনমান, জীবনব্যবস্থা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার দর নির্ধারণ এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো আলাদা মন্ত্রণালয় বা কমিশন নেই। নেই নাগরিকদের অভিযোগ সরাসরি শুনে নিষ্পত্তি করার মতো কোনো কমিশন। প্রতিদিন ভোক্তাদের লাখো-কোটি অভিযোগ এমনকি বাজার অস্থিরতা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে শুনানি বা বিচার ব্যবস্থা করার জন্য কোনো কমিশন না থাকায় সাধারণ নাগরিকরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
তিনি বলেন, নাগরিকদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ মনে করে নাগরিকদের জীবনমান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে স্বতন্ত্র স্বাধীন একটি কমিশন গঠন করা জরুরি। যে কমিশন শুধু জবাবদিহি করবে দেশের নাগরিক, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির কাছে। আর দায়বদ্ধ থাকবে জনগণের রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন, নিজস্ব অধিদপ্তরের মার্কেটিং কর্মকর্তা, থাকলেও শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরের কিছু কার্যক্রম ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। আবার তাদের লোকবল সংকট, আইনের দুর্বলতা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, অধিদপ্তরের ফুড ইন্সপেক্টর থাকলেও তাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়।
বিবৃতিতে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চালের মূল্য খাদ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করলেও তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ভোক্তা অধিদপ্তর। আমদানি করা বা আমাদের দেশে কৃষি উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়গুলো, তবে এ ক্ষেত্রে না দেশীয় কৃষকদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা হয়, না জনগণের ভোক্তা স্বার্থ রক্ষা করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ থাকলেও বাজারে মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে সিটি কর্পোরেশন। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দেখভাল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা দেখভাল করে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএ। টেলিযোগাযোগ সেবা দেখভাল করে ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিটিআরসি।
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি সরকারের সব মন্ত্রণালয় শুধু ব্যবসায়ী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের মূল্যায়ন বেশি করে থাকে। সব জ্বালানির মূল্য যেভাবে গণশুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন করে থাকে, যেখানে জনগণের শতভাগ স্বার্থরক্ষা অনেক ক্ষেত্রে না হলেও আংশিক প্রত্যাশা পূরণ হয়— এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু বাংলাদেশে আর কোনো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরে জবাবদিহিতার মাধ্যমে কোনো পণ্যের মূল্য নির্ধারণ বা সেবার মান নির্ধারণ হয় এর নজির নেই।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাই আমাদের দাবি বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার কমিশন বা ভোক্তা স্বার্থরক্ষা কমিশন নামে আলাদা স্বাধীন-সার্বভৌম কমিশন গঠন করা হোক। যে কমিশন শুধু রাষ্ট্রপতি, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও নাগরিকদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যা জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করবে। আমলাতন্ত্র যেখানে থাকবে উপেক্ষিত। এমনকি এই কমিশন যে কোনো সেবামূলক সিদ্ধান্ত বা সেবার ন্যায্যতা চেয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।
এএসএস/এসএসএইচ