বাজেটে শিশুদের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রয়োজন

বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ শিশু। ২০৪১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে আমাদের শিশুদের জন্য বাজেটে আলাদাভাবে বরাদ্দ করা প্রয়োজন। শিশুদের অধিকার রক্ষায় বেশি করে বিনিয়োগ না করলে এ ক্ষতি জাতি হিসেবে পুষিয়ে নেওয়া কখন সম্ভব হবে না। কারণ বর্তমানে বাজেটে শিশুদের জন্য যা বরাদ্দ হয়, তার মাত্র ১ শতাংশ তাদের অধিকার রক্ষায় ব্যয় হয়।
বুধবার (৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের সরকারি ব্যয়ে শিশুদের জন্য বরাদ্দ’ শিরোনামে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। যৌথভাবে বৈঠকটির আয়োজন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনিসেফ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও ডেইলি স্টার।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশুদের শিক্ষা খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সময় এখনই। সরকার প্রণীত ২০১৮ সালের ‘প্রস্ফুটিত শিশু’ প্রতিবেদনে শিশুদের জন্য বাজেট বরাদ্দ মোট সরকারি ব্যয়ের ১৫ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত করার অভীষ্ট রাখা হয়েছিল। এ বাজেটে তার প্রতিফলন অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, শিশুদের জন্য নির্ধারিত বাজেট প্রত্যেক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে যথাযথভাবে প্রস্তুত ও প্রকাশ করতে হবে। তাদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে আমাদেরই। শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে প্রত্যেকের সচেতনভাবে কাজ করতে হবে।
সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, শিশুদের অধিকারের কথা তারা নিজেরা বলতে পারে না। তাই তাদের কথা যারা বলে, বিশেষ করে মাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে শিশুদের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। শিশুদের কল্যাণে বাজেটে কী ঘাটতি রয়েছে, তা বের করে সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে যেতে হবে। বস্তিতে বসবাসরত শিশুদের জন্য ভাবতে হবে। তাদের জাতীয় অর্থনীতিতে যুক্ত করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ শিশুদের জন্য নানা কার্যক্রম করছে। তারা শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়োনিষ্কাশন নিয়ে যে কাজ করছে তা প্রশংসনীয়। আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দারিদ্র্যতা ছাড়াও আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বে আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো করছি। আমাদের সরকার শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই প্রদান করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। প্রাথমিক পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। নারী শিক্ষা অগ্রসর করার জন্য উপ-বৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। যদিও করোনাকালীন সময়ে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি।
তিনি বলেন, বাল্য বিবাহ রোধে আমার জেলা-উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে নানা কার্যক্রম চলছে। এ ব্যাপারে তিনি সমাজের প্রত্যেক নাগরিকের সহযোগিতা কামনা করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিই। হরতাল-বিক্ষোভ করে সমাজকে অশান্ত করে তুলি, যা উন্নয়নের অন্তরায়। আমাদের সরকার সামাজিক শান্তি ও উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করছে। কারণ আমাদের রয়েছে দৃঢ় নেতৃত্ব।
অনুষ্ঠানে বাজেট প্রণয়নে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় বাড়ানো ও সমন্বিত উপাত্তভিত্তিক পর্যালোচনার ওপর জোর দেন বক্তারা।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এইকো নারিতা, ইউনিসেফ প্রতিনিধি ভিরা মেনডোসা প্রমুখ।
এসআর/এসকেডি