চট্টগ্রামে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল করতে না দেওয়ার অভিযোগ

মহররম মাসের ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামের জমিয়তুল ফালাহ কমপ্লেক্স মসজিদে গত ৩৬ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১০ দিনব্যাপী শাহাদাতে কারবালা মাহফিল। আয়োজকদের অভিযোগ- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নীতিমালার অজুহাতে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় এ বছর মাহফিলের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
আয়োজকরা এর জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ারকে দায়ী করে বলছেন, জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাহফিল করার অনুমতি দিচ্ছেন না তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তৌহিদুল আনোয়ার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা প্রতিবছরই মাহফিল করে। তবে এ বছর জানুয়ারিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় হবে নামাজ। আর অন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান হবে মসজিদের নীচ তলায় বা মাঠে। কিন্তু ওনাদের দাবি দীর্ঘদিন ধরে দ্বিতীয় তলায় মাহফিল করে আসছি। মাহফিলের জন্য দ্বিতীয় তলা চাই। মাহফিলের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। অনুমতি অবশ্যই দেবো। শুধু স্থানটি নিয়ে দ্বিধা ছিল।
শাহাদাতে কারাবালা মাহফিল কর্তৃপক্ষ বলছে, একই অজুহাতে গত বছর জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদে আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনের আয়োজন করতে দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সংগঠকরা।
শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের প্রকাশনা সম্পাদক জাফর উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাহফিল মসজিদের দ্বিতীয় তলায় করার অনুমতি দিতে চায়নি চট্টগ্রামের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক। এর প্রতিবাদ করি আমরা। তবে এখন শুনছি অনুমতি দেবে। আমরা একটা চিঠি দিয়েছি, তবে এর উত্তর পায়নি। মাহফিলের ব্যাপারে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের অনুমতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এ মাহফিলে দেশি-বিদেশি ইসলামী স্কলার, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও উলামা মাশায়েখরা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করে আসছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এতো বছর ধরে অত্যন্ত সুশৃংখলভাবে পরিচালিত এ মাহফিল আয়োজন হঠাৎ করে বন্ধের পায়তারা করছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম শাখা। এতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। হঠাৎ করে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল ও কেরাত সম্মেলন বন্ধের নির্দেশ সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ আলেম সমাজকে ক্ষেপিয়ে দেওয়ার অপকৌশল কি-না তাও খুঁজে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অহেতুক বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে সরকারকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বেশ কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম শাখা কর্তৃক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল বন্ধের ঘোষণা সে ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ কি-না সে বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন সুজন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদে শাহাদাতে কারবালা মাহফিল দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন করে আসছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যদি এই মাহফিল করার অনুমতি না দেয় তাহলে আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে বসে কেউ যদি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় তবে তা কেউ মেনে নেবে না। কারণ, শান্তিপ্রিয় লাখো মুসলমান এই পবিত্র অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত।
অভিযোগের বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক তৌহিদুল আনোয়ার ঢাকা পোস্টকে আরও বলেন, আমি যতটুকু জানি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী কথা বলছেন ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে। জিনিসটা অনেকটা সমাধানের পথে বলতে পারি। অনুষ্ঠান হবে কোনো সন্দেহ নেই।
শাহাদাতে কারবালা মাহফিল কমিটির পক্ষ থেকে একটি আবেদন দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আবেদনটি মহাপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। যতটুকু পজেটিভ লেখা যায়, লিখে দিয়েছি। যেহেতু ধর্মীয় বিষয় আমি ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অনুষ্ঠান হবে কোনো সন্দেহ নেই। উনাদের দাবিটা যাতে মানা হয় সেই বিষয়ে চেষ্টা চলছে। মাঠ তো ওপেন, মাঠে তো যে কোনো সময় করতে পারে। দ্বিতীয় তলার বিষয়ে কথা চলছে।
আপনি জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন এমন একটি অভিযোগ উঠেছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি তো শুধু চাকরি করি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড থেকে সিদ্ধান্ত দিলে,আমি কি বাইরে গিয়ে অন্য সিদ্ধান্ত দিতে পারি। আমি তো চলে যাচ্ছি। বদলি অর্ডার হয়ে গেছে। আমি হজে যাচ্ছি।
কেএম/এনএফ