গাউছুল আজম কনফারেন্স নবীপ্রেমীদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্র

চট্টগ্রামের কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবারে গাউছুল আজম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। অরাজনৈতিক তরিক্বতভিত্তিক আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশের উদ্যোগে পবিত্র মিরাজুন্নবী (দ.) ও কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, খলিলুল্লাহ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল (দ.) হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ তরিক্বতের ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্স মাগরিবের আগেই আশপাশের এলাকা ও সড়ক নবীপ্রেমিক মুসল্লিদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে রূপ নেয়।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাদে জুমা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদের গাউছুল আজম সিটিতে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক গাউছুল আজম কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের মহান মোর্শেদ, আওলাদে রাসূল (দঃ) হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী ছাহেব।
ঈমানের পরীক্ষা আল্লাহর অফুরন্ত রহমত প্রাপ্তির মাধ্যম উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, যুগে যুগে ইসলামের ইতিহাসে আল্লাহ ও রাসুল (দঃ) এর পথে মতে যারা নিজেদের নিয়োজিত করেছেন সকলকেই কঠিন পরীক্ষা ও মুসিবতের মাধ্যমে জীবন কাটাতে হয়েছে। কিন্তু সুখের বিষয় হলো এ পথের কঠিন বাস্তবতায় আল্লাহর দয়া সব সময় ছিল। ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে স্বয়ং আল্লাহ সব সময় সাথী হয়ে থাকেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।
তিনি বলেন, দ্বীনের পথে দাওয়াত দিতে গিয়ে স্বয়ং রাসুল (দ.) তায়েফের জমিনে রক্তাক্ত হয়েছিলেন। আপন জন্মভূমি ত্যাগ করতে হয়েছিল। শিয়াবে আবু তালিবে তিন বছর নির্জনে কাটাতে হয়েছিল। তীব্র কষ্টে ধৈর্য ধারণের মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হয় জীবনের বেশিরভাগ সময়। এমন দুঃখ কষ্টের ভেতরে লুকিয়ে থাকে জান্নাতের হাতছানি।
প্রধান অতিথি বলেন, এত বাধা, দুঃখ-কষ্ট একমাত্র আল্লাহর পথে চলতে গিয়ে। এখানে দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ ছিল না। সময়ের পরিক্রমায় গাউছে আজমের তরিক্বতেও এমন পরীক্ষা, ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কারণ হকের পথে বাধা আসবে, জুলুম নির্যাতনের কষ্ট আসবে, কারণ উনি খলিলুল্লাহ খলিফাতুর রাসুল। এসব কিছু চৌদ্দশত বছর আগের সুন্নত। আল্লাহর অনুগ্রহে বর্তমানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আপাত দৃষ্টে কষ্ট মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে এ কষ্ট মহামুক্তির সুসংবাদ, নিয়ামতের আধার। হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমস্ত জীবন কষ্টের মহাসমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন ধৈর্যের মাধ্যমে। সবরে জামিলের অনুপম দৃষ্টান্ত যেন উনার পবিত্র জীবন। উনি রাসুলনোমা মুর্শেদ, প্রিয় রাসুলের (দ.) পথ ধরে চলেছেন আজীবন। তাই উনার পথেও ঈমানের পরীক্ষা সীমাহীন, এতো আনন্দের বিষয়। ইনশাআল্লাহ এ পথের দুনিয়াতে মহা পুরস্কার হলো খাতেমা বিল খায়ের তথা ঈমানের সাথে মৃত্যু, প্রিয় রাসুলের দিদার লাভের সৌভাগ্য, দুঃখ কষ্ট ভোগ করার মাধ্যমে সুন্নাতে রাসুল (দ.) আদায়ের মহা সুযোগ।
হযরত গাউছুল আজম সমস্ত জীবন খুব সাধারণ বেশে কাটিয়েছে গেছেন। ছিল না অর্থ-বিত্ত, ক্ষমতা-খ্যাতির মোহ। উনার একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ ও রাসূলকে (দ.) রাজি খুশি করানো। যার জন্য সারা জীবন দিনে-রাতে কেঁদেছেন। তরিক্বত ও মাদ্রাসার খেদমতে নিরলস ত্যাগ ও শ্রম দিয়ে গেছেন। উনিই বলেছেন এ তরিক্বতকে আমি নবির (দ.) কাছে সোপর্দ করেছি। বস্তুত পক্ষে এ তরিক্বতে আসা সহজ হতে পারে কিন্তু এখানে টিকে থাকতে গেলে পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কারণ আল্লাহ কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে বলেছেন ‘আমি তোমাদের কিছু ভয় ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ জীবন ও ফল ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব, তুমি ধৈর্যশীলগণকে সুসংবাদ দাও।’
আল্লাহকে পাওয়ার পথে পরীক্ষা থাকবেই, কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন পরীক্ষা নেবেন। মনে রাখতে হবে, সবরকারীর সাথে স্বয়ং আল্লাহ থাকেন। হযরত গাউছে আজম আল্লাহর রঙে রঙিন, নবীর মুহাব্বতে নিজেকে বিলীন করেছেন। উনি কোরআনকে ধারণ করেছেন নিজের মাঝে। কোরআনের নূরকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন ফয়েজে কোরআনের মাধ্যমে।
হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, ‘তিনটি জিনিস তোমাদের কাছে আমানত রেখে যাচ্ছি কাগতিয়া মাদরাসা, আমার তরিক্বত ও তোমাদের ঈমান।’ এখানে ঈমানের কথা বলেছিলেন কারণ ঈমান রক্ষার জন্য যে পরীক্ষা আমাদের উপর আসবে সেটা উনি উনার গাউছিয়্যতের দৃষ্টিতে আগেই দেখেছেন। উনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, এখলাস ও সবরের মাধ্যমে কিভাবে জীবন কাটাতে হয়। উনার সমস্ত জীবনই খুলছিয়ত ও লিল্লাহিয়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখন আমাদের একটাই দায়িত্ব এখলাসের সঙ্গে তরিক্বতের পথে দায়েম ও কায়েম থাকা। সফলতা দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ, আর গাউছুল আজমের সব কথা ও কাজ তৌহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য। এ পথের আলো হলো প্রিয় রাসুলের মুহাব্বত। ইনশাআল্লাহ, আঁধার শেষে নতুন সকাল আসবেই। পৃথিবীর প্রান্ত হতে প্রান্তে এ মকবুল তরিক্বত পৌঁছে যাবে স্বমহিমায়। এতো গাউছুল আজমের দোয়া, নিঃসন্দেহে যা কবুল হবেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য গাউছুল আজম কনফারেন্সে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ নূর খাঁন, প্রফেসর ড. জালাল আহমদ, মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি মুহাম্মদ সালাহ উদ্দীন, জালালাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মুহাম্মদ শাহেদ ইকবাল বাবু, কাউন্সিলর আলহাজ্ব মুহাম্মদ মোবারক আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব সরোয়ার কামাল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান।
বক্তব্য রাখেন- হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবু বকর, মাওলানা মুহাম্মদ রকিব উদ্দিন, মুহাম্মদ সালাউদ্দীন, মাওলানা মুহাম্মদ এরশাদুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন নূরী প্রমুখ।
ওএফ