নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি বাপার

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ জুন ২০২২, ১২:২২ পিএম


নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনার দাবি বাপার

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ ক্রমেই উপরে উঠে আসছে, যার ফলে সমুদ্রগামী নদীর প্রবাহ ধীরগতি সম্পন্ন হয়ে পড়ছে এবং নদীগুলো আগের মতো কার্যকরভাবে পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না। নদীর ধীরগতির কারণে হাওর অঞ্চলে বন্যা প্রলম্বিত হচ্ছে। তাই নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনাসহ সরকারের কাছে ৬ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

মঙ্গলবার (২১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাপা আয়োজিত ‘আকস্মিক বন্যায় সিলেটে মানবিক বিপর্যয় : কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব আহ্বান জানান বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান।

বাপার অন্যান্য দাবিগুলো হলো- নদীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করা; বাংলাদেশের কৃষ্টি, শিল্প-সাহিত্য, সভ্যতা এবং ব-দ্বীপ গঠনে নদীর ভূমিকা হৃদঙ্গম করে নদী ব‍্যবস্থাপনা নির্ধারণ করা; নদীর প্রাকৃতিক কার্যপ্রক্রিয়া আমলে নিয়ে নদীর প্লাবনভূমি নদীর প্রবাহের জন্য বরাদ্দ রেখে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে নদীর ধ্বংস প্রক্রিয়া রহিত করে, জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট বাড়তি প্রবাহ ধারণের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদী বক্ষ থেকে বাড়তি পলি ক্রমন্বয়ে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সরানো; প্রত্যেকটি নদীর উৎস থেকে মুখ পর্যন্ত অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত পানি-পলি ব্যবস্থাপনার জন্য সব অংশীজনের স্বার্থরক্ষাকারী দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন করা; জাতিসংঘের পানি প্রবাহ আইন কার্যকর করে, সেই আইনের আলোকে চুক্তি করতে হবে ও গ্যারান্টি ক্লজসহ সেই চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং সব আন্তঃদেশীয় নদীর পানি-পলি ব্যবস্থাপনাকে রাষ্ট্রীয় কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে হবে। নদী বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে এই সত্যটি সবার হৃদয়ে ধারণ করা ও সেই অনুযায়ী সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা।

সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্যে খালেকুজ্জামান বলেন, বিগত তিন মাসে সিলেট এবং সুনামগঞ্জসহ হাওরের বিভিন্ন অঞ্চল তিনবার আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার জেলা শহরসহ প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। হাওয়ের উজানে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় এবং আসামে গত দশ দিনে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। শুধু জুন মাসেই মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ৪ হাজার ৮১ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময়ে সুনামগঞ্জেও রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ বছরের আগেও ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় হাওরের জানমাল, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাছাড়া ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও হাওরের বিভিন্ন অংশে বন্যা হয়েছিল। 

তিনি বলেন, বন্যার অন্তর্নিহিত কারণ হিসাবে বৈশ্বিক, আন্তঃদেশীয় এবং আভ্যন্তরীণ কারণকেই দায়ী করা যায়। বৈশ্বিক কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আমাদের অঞ্চলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং বন্যার মাত্রা যে বেড়ে যাবে, তা বিজ্ঞানীরা আগেই প্রাক্কলন করেছিলেন।  

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মেঘনা অববাহিকার ৪৩ শতাংশ এলাকায় অবস্থিত, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিগত সাত দশক ধরে বেষ্টনী বা কর্ডনভিত্তিক ভুল পানি নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নদী, জলাশয় এবং হাওরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। নদীর পাড় ধরে বাঁধ, পোল্ডার এবং বিভিন্ন ধরনের ভৌত অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। হাওরের সব ভূউপরিস্থ প্রবাহই ভৈরব বাজারে অবস্থিত মেঘনা নদীর উপরে নির্মিত তিনটি রেলওয়ে ও সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ব্রিজগুলোর কারণে নদীর প্রস্থচ্ছেদ অনেকটা কমে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাপার সহ-সভাপতি ও বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম, নির্বাহী সহ-সভাপতি ডা. মো. আব্দুল মতিন। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার, নদী ও জলাশয় বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. হালিম দাদ খান, যুব বাপার সদস্য সচিব রাওমান স্মিতা প্রমুখ।

এমএইচএন/জেডএস

Link copied