শিশু-কিশোরদের দখলে আফতাব নগর হাট

কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজধানীর আফতাব নগর হাটে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নাটোর, পাবনা এবং ফরিদপুর এলাকা থেকে আসছে ট্রাকভর্তি গরু। ছোট-বড় নানা আকারের লাল-কালো, সাদা রঙের হাজার হাজার গরু দেখতে হাটে আসছে শিশু-কিশোররা। গরু না কিনতে পারলেও ব্যবসায়ীদের কাছে গরুর দাম জিজ্ঞাস করছে, গরুকে খড় খাওয়াচ্ছে, গরু মাথা কিংবা শরীরে হাত বুলিয়ে আদর করছে তারা।
রোববার (৩ জুলাই) বিকেলে আফতাব নগর হাটে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে খুঁটিতে বাঁধা রয়েছে গরু। এই গরু দেখতে স্বজনদের পাশাপাশি দলে দলে হাটে এসেছে শিশু-কিশোররা। এদের কেউ এসেছে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, আবার কেউ এসেছে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে। অর্থাৎ বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি না থাকলেও গরু দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই।
দুরন্তপনা শিশুদের কয়েকটি গ্রুপ আফতাব নগর ব্রিজ পারও হওয়ার সময়ই চুপি সারে ট্রাকে উঠে যাচ্ছেন। কেউ কেউ গরুকে খর, ঘাস কিংবা ভুসি খাওয়াচ্ছে।

অপরদিকে কিশোরদের গ্রুপের মধ্যে কেউ কেউ গরু দাম জিজ্ঞেস করছে, কেউ কেউ গরুর সঙ্গে সেলফি তুলছে। হৈই হুল্লোড় করছে। তাদের ঘুরাঘুরি দেখে মনে হচ্ছে- তারা ঈদের আনন্দে রয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ গরুকে খাবার খাওয়াচ্ছেন, কেউ গরুর শরীর মুছে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ গরু রাখার জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।
আরও পড়ুন : নাম তার মন্টু, খায় খড়-ভুসি, দাম ২০ লাখ
ফরিদপুর থেকে ৯টি গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে দুদিন হলো হাটে এলাম। কিন্তু গরু কেনার জন্য কোনো ক্রেতা এসে দাম বলেনি। যে কয়জন দাম জানতে চেয়েছে তারা কিশোর।
ব্যবসায়ী আমিনুল হাসান পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনও কেনা-বেচা শুরু হয়নি। তাই দলে দলে ছেলেরা এসে গরুর দাম জিজ্ঞেস করছে। তারা গরুর ছবি তুলছে, ভিডিও করছে।

বাবা-মার সঙ্গে গরু দেখতে আসা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আব্বু-আম্মুর সঙ্গে হাটে এসেছি। গরু দেখছি, আমি গরুকে খর দিয়েছি, গরু খেয়েছে। আমার অনেক ভালো লেগেছে।
ছয় বন্ধুসহ আফতাব নগরের হাটে গরু দেখতে আসা নোবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেরাদিয়া হাট দেখে এসেছি। এখন এ হাট দেখছি, গরু কোনটার দাম কত জানছি। গরুর সঙ্গে দুষ্টুমিও করছি। অনেক ভালো লাগছে। গরুর হাটে এসে গরু দেখতে সবারই ভালো লাগে।
আরও পড়ুন : নবাব-সুলতান-লাল বাহাদুরের সঙ্গে খাসি ফ্রি
মধ্যবাড্ডার হাফেজি মাদারাসার শিক্ষার্থী শামসুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাজারে গরু দেখতাম আইছি, দেখছি অনেক ভালো লাগছে।
গরু হাটের ইজারাদার মিজানুর রমহান ধনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই কম ছিল। একারণে আশপাশ এলাকার ছেলেরা ঘুরতে এসেছে। যতই ঈদের ঘনিয়ে আসবে, কেনা-বেচা শুরু হবে তখন শিশু কিংবা কিশোররা হাটের ভেতর ঢুকতে সাহস পাবে না।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তখন ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি গরু আসা যাওয়া করবে। গরুর গুঁতো কিংবা লাথির ভয়ে আর কাছেই আসবে না।

উল্লেখ্য, এবার কোরবানির ঈদে মোট ১ কোটি ২১ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কোরবানির এ পশু কেনা-বেচার জন্য ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মোট ১৮ জায়গায় অস্থায়ীভাবে পশুর হাট বসানো হয়েছে।
ঢাকা সিটির ১৮টি জায়গার মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আফতাবনগর, ভাটারা (সাইদ নগর), বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বছিলার ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ এর খালি জায়গা এবং ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁচপুরা বেপারিপাড়ার রহমান নগর আবাসিক প্রকল্প এলাকায় অস্থায়ী এ ৮টি হাট বসছে।
অপরদিকে দক্ষিণ সিটির ১০টি জায়গার মধ্যে খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী ক্লাব সংঘ মাঠ, হাজারীবাগ ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজ মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটসহ আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গাসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা, যাত্রাবাড়ী ধনিয়া কলেজ সংলগ্ন আশপাশের এলাকা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, লালবাগ রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা এবং আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গায় অস্থায়ী হাটগুলো বসছে।
এমআই/আইএসএইচ
