সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনসহ ৭ দফা দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুলাই ২০২২, ০৬:৩২ এএম


সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনসহ ৭ দফা দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নসহ সাত দফা দাবিতে আগামী ২২ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

শনিবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম শাখা এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷

রানা দাশগুপ্ত বলেন, সরকারি দল নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের যে লড়াই, সে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে ওই দিন গণঅনশন কর্মসূচি পালিত হবে। এরপর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সমাবেশ থেকে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।

তিনি  বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় স্ব স্ব ধর্মের মতো অন্য সকল ধর্মের প্রতি সমানভাবে শ্রদ্ধাশীল। এখনো তারা মাজারে, উপাসনালয়ে মানত দেয়, প্রার্থনা করে। সংখ্যালঘু নারীরা মসজিদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শ্রদ্ধা, মাথায় কাপড় দেয়। অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ধর্ম অবমাননার মিথ্যা জিগির তুলে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার চালিয়ে সংখ্যালঘু শিক্ষকসহ তাদের মন্দির উপাসনালয়, ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে।  এর মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘু জনগণের মনে ইতোমধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে ও তাদের ভবিষ্যৎ শান্তিপূর্ণ জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, দেশবাসী সবাই ইতিমধ্যে জেনেছে, ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, হনুমানের পায়ের কাছে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে এসব অপকর্ম চালানো হয়েছে, হচ্ছে। এরপরেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপথগামী কেউ যদি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে তার দায় তার, অন্য কারো নয়। কিন্তু একজনের দায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর চালিয়ে দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করা জঘন্য চক্রান্তের অংশ বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, এসব ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সবটাই পরিকল্পিত। সরকার, সকল রাজনৈতিক দল, শ্রদ্ধেয় আলেম ওলামা সমাজের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন সংখ্যালঘুদের জানমাল সম্পদ রক্ষায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করি।

ধর্মের পবিত্রতা স্বার্থে পবিত্র ধর্মকে রাজনীতির সাথে যুক্ত না করার জন্য রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতক পর সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ভয়াবহ বিপর্যয় ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে এবং মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুণ্নে ধর্মনির্বিশেষে যারা তৎপর তাদের বিরুদ্ধে সচেতন সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের জন্য সরকার, প্রশাসন ও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত বলেন, আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়নে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল আন্দরকিল্লা হয়ে লালদিঘী ময়দানের মোড়ে এসে শেষ হয়। সংগঠনের দাবিগুলো হলো, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, বৈষম্য বিলোপ আইন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং মহানগর যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুবেল পালের সঞ্চালনায়  এ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। 

কেএম/এসকেডি

Link copied