স্ত্রীকে ইভটিজিং : পুলিশকে জানাতে চাওয়ায় স্বামীকে হত্যা

ঢাকার কেরাণীগঞ্জে একই গলিতে থাকতেন রাকিব (২০) ও সাগর। মাত্র মাস তিনেক আগে বিয়ে করেন সাগর। রাকিব তার অন্য বখাটে বন্ধুদের নিয়ে গলিতে বিভিন্ন মেয়েসহ সাগরের স্ত্রীকেও নিয়মিত ইভটিজিং করতেন। রাকিবকে গলির মুখে আড্ডা না দিতে অনুরোধ করেন সাগর। তাতে কাজ না হওয়ায় পুলিশে অভিযোগ করার কথাও বলেন সাগর।
এতে ক্ষিপ্ত হয় রাকিব। ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদকারী সাগরকে শিক্ষা দিতে গত ১১ জুলাই দিবাগত রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাগরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে হাসপাতালে মারা যায় সাগর।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জ থানার পূর্ব বন্দডাকপাড়ায় ছুরিকাঘাতে মো. সাগরের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত রাকিবকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় সৃষ্ট দ্বন্দ্বের জেরে যুবক খুনের ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে।
সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে রাকিবকে গাজীপুরের টঙ্গি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাকিব কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব বন্দডাকপাড়ার জব্বার ম্যানেজারের ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাকিব ও নিহত সাগর একই এলাকার পাশাপাশি গলির বাসিন্দা। রাকিব তার অন্য বখাটে বন্ধুদের নিয়ে সাগরদের গলিতে দিন-রাত নিয়মিত আড্ডা দিতেন। বিভিন্ন মেয়েদের ইভটিজিংয়ের পাশাপাশি সাগরের নববিবাহিত স্ত্রীকেও ইভটিজিং করতেন রাকিবরা।
বিষয়টি সাগর জানার পর রাকিবকে সাবধান করেন। গলির মুখে আড্ডা না দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারা আড্ডা অব্যাহত রাখলে মহল্লার গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ থানা পুলিশে অভিযোগ করার কথা বলেন সাগর।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সাগরকে শিক্ষা দিতে ঈদের পরদিন পরিকল্পিতভাবে পূর্ব বন্দডাকপাড়া মেজবাহ উদ্দিনের বাড়ির ফাঁকা জায়গায় ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন রাকিব। অনুষ্ঠানের শেষ জিনিসপত্র গোছানোর সময় রাত পৌনে ৩টার দিকে রাকিব ও তার অন্য সহযোগীরা সাগরসহ তার বন্ধুদের মারধর শুরু করেন। প্রাণে বাঁচার জন্য দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে জয় মিয়ার গলিতে সাগরের কোমরের বাম পাশে ছুরিকাঘাত করে ও কিল-ঘুষি, লাথি মেরে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায় রাকিব।
পরে সাগরকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১২ জুলাই সন্ধ্যায় মারা যান সাগর।
ওই ঘটনায় নিহত সাগরের বাবা খোকন খান রাকিবকে প্রধান আসামি করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করে। মামলা নং- ১৯/৩৩৭। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
জেইউ/ওএফ