সাভারে দুর্ঘটনায় ৪ বিজ্ঞানী নিহত হওয়ার ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি

সাভারে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ বিজ্ঞানীর নিহত হওয়ার ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
এছাড়া নিহত চার তরুণ বিজ্ঞানীর নামে গবেষণাগারের নামকরণ, স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ, নিরাপদ সড়ক আইনের কঠোর বাস্তবায়ন এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রীর ৩০টি নির্দেশনার কঠোর বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সোমবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে এসব দাবি জানানো হয়।
গত ৫ জুন সাভারের বলিয়ারপুরে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চারজন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী নিহত হন। তারা হলেন- ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা পূজা সরকার, ড. মো. আরিফুজ্জামান, ফারহানা নিপা ও প্রকৌশলী কাওসার আহমেদ রাব্বী নিহত হন। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ গ্রহণ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘নিহত বিজ্ঞানীদের পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীগণ’।
মানববন্ধনে সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, এগুলো দাবি খুব যৌক্তিক দাবি। এই দাবি কেন করতে হবে সেটি বুঝছি না। এই যে আপনারা বলছেন চালকের লাইসেন্স ছিল না। আসলে লাইসেন্স বের করা তো কঠিন কিছু না। শুধুমাত্র ৪-৫ হাজার টাকার ব্যাপার। লাইসেন্সের পরীক্ষা অনেক কঠিন, পাস করা সহজ না। গাড়ির ফিটনেসের কাগজও একইভাবে বের করে তারা। এজন্য গাড়ি নিয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন মনে করে না তারা।
দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, উদীয়মান তরুণ এসব বিজ্ঞানীদের এভাবে অকালে চলে যাওয়া মানে একেকটা স্বপ্নের মৃত্যু হওয়া, স্বপ্নকে হত্যা করা। এই হত্যাকাণ্ড প্রতিদিন ঘটছে। বিজ্ঞানী তো বড় ব্যাপার, একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলেও একটা স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে। শুধু সেই মানুষগুলোর স্বপ্নের মৃত্যুই ঘটে না, পুরো পরিবারের স্বপ্নের মৃত্যু ঘটে।
মানববন্ধন সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, আইন সম্পর্কে সবাই সচেতন হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে কঠোর হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিজ্ঞানী পূজা সরকারের বাবা অমল সরকার বলেন, মাত্র ছয় বছর বয়সেই আমার মেয়ে পূজা সরকার তার মাকে হারায়। আমি একাই তাকে মানুষ করেছিলাম। ওর জীবনটা যখন গুছিয়ে এনেছিল, ঠিক তখনই এই দুর্ঘটনা ওকে কেড়ে নিল। আমি একজন হতভাগ্য পিতা। আমি ওকে জন্ম দিয়েছি, কিন্তু ওর জীবন রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, সড়ক নামক মৃত্যুকূপে হারিয়ে গেছে আমার মেয়ে। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল, সেটি অধরাই থেকে গেল। দুর্ঘটনার দেড় মাস হয়ে গেল, এখনো এই দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ ধরতে পারেনি। বিচার দেরিতে হওয়া মানে বিচার না হওয়া। আমি চাই এই দুর্ঘটনার সঠিক বিচার হোক। যাতে এভাবে সড়কে আর কারো মৃত্যু না হয়।
এ সময় পিপলস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মানিক চন্দ্র দে, যাত্রীকল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী, সমাজসেবক হাসান মঞ্জুর ও কর্মজীবী নারীদের পক্ষে শেখ শাহনাজ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয় একই দাবিতে।
এমএস/জেডএস