পানিসম্পদ রক্ষায় প্রযুক্তি নির্ভর সমাধানে প্রতিযোগিতা

তরুণদের সম্পৃক্ত করে পানিসম্পদ রক্ষায় প্রযুক্তি নির্ভর সমাধানে বাংলাদেশ ওয়াটার মাল্টি-স্টেকহোল্ডারস পার্টনারশিপের (বিডব্লিউএমএসপি) সাত সদস্য আয়োজন করেছে ‘ওয়াটার ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশন-২০২১’ (ডব্লিউআইসিসি) নামের প্রতিযোগিতা।
এটুআই-এসপায়ার টু ইনোভেট, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা, ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ (২০৩০ ডব্লিউআরজি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) ও ইউনিলিভার পিওরইট যৌথভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ‘ওয়াটার ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশন-২০২১’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পানিসম্পদের সুরক্ষায় মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তনে সাহায্য করতে মাসব্যাপী এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রযুক্তি নির্ভর সমাধান খুঁজে বের করা হবে। পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি শিল্পখাতে পানির অধিক ব্যবহার ও শোধনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা বাড়াতে উদ্যোগটি ভূমিকা রাখবে। এছাড়া সুপেয় ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির জন্য অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও এটি সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ডব্লিউআইসিসি-২০২১’ প্রতিযোগিতার থিম রাখা হয়েছে, #WaterSecurity #Innovation #Challenge। হ্যাকথন ধরনের এ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য পানির ব্যবহার নজরদারির জন্য ‘হাউজহোল্ড ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট’ ও ‘ইন্ডাস্ট্রি ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট’ ব্যবহার করে যথাযথ টুলস ও প্লাটফর্ম খুঁজে বের করা, যেটি নাগরিকদের এবং শিল্পখাতকে পানি সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ইনোভেশন শব্দটি সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ২০৩০ ওয়াটার গ্রুপ গঠনসহ এমন আরও অনেক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি এর মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী ফল বয়ে আনবে ও এই ইনোভেশনের যথাযথ প্রয়োগ আমরা করতে পারব। ডেল্টা প্ল্যান ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা আগে আমাদের ছিল না। আগে নদীরক্ষা বা পানিসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে কাজ হচ্ছিল খুব অপরিকল্পিতভাবে। অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত মাটির গভীরের পানি উত্তোলন আবার যখন পানি ছেড়ে দিচ্ছি তখন সৃষ্টি করছি দূষণ, এই দুই ভাবে আমরা পানিসম্পদের ক্ষতি করে যাচ্ছি।
তরুণ উদ্ভাবকদের সম্ভাব্য সমাধানগুলো সামনে নিয়ে আসার পথ সুগম করার লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় আইডিয়া জমাদান শুরু হয়েছে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে, চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। উদ্ভাবকরা চ্যালেঞ্জ ফান্ডের ওয়েবসাইট (http://challenge.gov.bd/) এর মাধ্যমে আইডিয়া জমা দিতে পারবেন।
এই প্রতিযোগিতায় জমা পড়া প্রজেক্টের মূল্যায়ন ও স্ক্রিনিং চলবে ১৬ মার্চ থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত। এরপর বাছাই করা ও উপযুক্ত সমাধানগুলোকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি বুটক্যাম্পেরও আয়োজন করা হবে। বিচারক প্যানেল বাছাই করা সমাধানগুলো নির্বাচন করবেন। সবশেষে টেকনিক্যাল ইভাল্যুয়েশন প্যানেল (টিইপি) স্ক্রিন ও চূড়ান্ত নির্বাচনের মাধ্যমে সেরা উদ্ভাবক দল বাছাই করা হবে। তারপর আগামী ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবসে প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে আসরটি অনুষ্ঠিত হবে। এদিন প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত বিজয়ী উদ্ভাবক দলের নাম ঘোষণা করবেন বিচারকরা। এছাড়া পানি সংরক্ষণ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশের পানির উৎসগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য ওয়েবিনারও অনুষ্ঠিত হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নাধীন ও ইউএনডিপির সহায়তায় পরিচালিত এটুআই-এসপায়ার টু ইনোভেট প্রোগ্রাম বিভিন্ন সময় নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে চ্যালেঞ্জ ফান্ড দিয়ে আসছে। এর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে এটুআই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহাম্মদ, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. আব্দুল মান্নান, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি মো. শাহিদ-উল-মুনীর, বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর, ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের প্রধান শামীমা আখতার, ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপের রিজিওনাল কোঅর্ডিনেটর সাইফ তানজিম কাইয়ুম প্রমুখ।
এএসএস/এসএসএইচ