এসএসসির পর কানাডা যাওয়ার কথা ছিল হিশামের

Kazi Munzurul Islam

৩০ জুলাই ২০২২, ০১:৪৪ পিএম


এসএসসির পর কানাডা যাওয়ার কথা ছিল হিশামের

মোসআব আহমেদ হিশাম। তার মা-বোন কানাডায় থাকেন। বাবা মারা গেছেন ছোট বেলায়। এসএসসি পরীক্ষার পর হিশামের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। পরিবারের অনুপস্থিতিতে থাকতেন চাচা আকবর হোসেন মানিকের কাছে। তিনি বলেন, হিশামকে তার মা আমার কাছে আমানত দিয়ে গেছে। তিন বছর ধরে আমার কাছে ছিল। দুর্ঘটনায় হিশাম চলে গেল, এখন আমি হিশামের মায়ের কাছে কি জবাব দেব?

ভাতিজা হিশামের পড়ার টেবিলে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন চাচা আকবর হোসেন মানিক। তিনি বলেন, ভাতিজা ঘুরতে যাওয়ার আবদার করায় না করিনি। বাসা থেকে যাওয়ার আগে কি কাপড় পরবে জিজ্ঞেস করেছিল। খৈয়াছড়া পৌঁছে আমাকে কল দিয়েছিল। এরপর আর কোনো কথা হয়নি।

তিনি বলেন, ভাইয়ের ছেলে হলেও সে আমার নিজের ছেলের চেয়ে বেশি ছিল। তিন বছর আগে তার মা কানাডা চলে যায়। এরপর থেকে হিশাম সারাক্ষণই আমার সঙ্গে থাকত। মা, ভাই, বোন কেউ না থাকলেও কখনও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা করেনি। তার সবকিছু ছিল গোছানো।

আকবর হোসেন বলেন, হিশামকে কানাডা নেওয়ার জন্য তার মা কাজ শুরু করেছিলেন। এসএসসি পরীক্ষার পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

dhakapost

আরও পড়ুন: ছেলের সনদগুলো বুকে জড়িয়ে মায়ের আহাজারি

শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রীর মধ্যে হিশামও ছিলেন। জানা গেছে, হিশামের বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা মোজাফফর আহম্মদ মারা যান। তারা দুই বোন দুই ভাই। হিশাম সবার ছোট। বড় ভাই জিহাদ আহম্মদ স্পেনে থাকে। মা জাহেদা বেগমের সঙ্গে সাজিয়া আফরিন জুমু কানাডায় থাকে। এক বোন রিফাত আফরিন জয়া ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। কে এস নজু মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার।

হিশামের বোনের জামাই হাছান মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিশামকে জেএসসি পরীক্ষায় পর ঢাকায় নিয়ে পড়ালেখা করাতে চেয়েছি। সেখানে একটি কোচিং সেন্টার ও ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ঢাকায় সে থাকেনি। বারবার বলেছে, ঢাকায় ভালো লাগে না। তাই চট্টগ্রামে চলে এসেছে। আমার আর তার বোনের চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল আগামী মাসে। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেল। এসএসসি পরীক্ষার পর তার কানাডায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। হিশামের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামে।

হিশামের চাচা মোহাম্মদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাতে তার মাকে মৃত্যু সংবাদটি জানানো হয়েছে। এরপর থেকে তার মা জাহেদা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

হাশিমের চাচাতো ভাই জোরাইছ উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হিশাম খুব ভালো ছিল। আমরা শহরে থাকি। গ্রামে গেলে তার সঙ্গে আড্ডা দিতাম। তার মধ্যে কোনো অহংকার ছিল না।

শনিবার সকালে কে এস নজু মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে হিশামের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

কেএম/এসএসএইচ

টাইমলাইন

Link copied