আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে চলত মাদক মিশ্রিত পানীয় বিক্রি

রাজধানীর নারিন্দায় একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের কারখানায় তৈরি করা হচ্ছিল মাদক মিশ্রিত বিশেষ এক পানীয়। মাদক মিশ্রিত এই পানীয়র প্রতি কামরাঙ্গীরচরসহ বেশ কয়েকটি এলাকার যুবকরা আসক্ত হয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি র্যাবের কাছে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসে।
সর্বশেষ গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করে র্যাব-২।
আটকরা হলেন, চক্রের মূলহোতা মো. ওয়াজেদ ইসলাম শান্ত (২০), রাসেল (২৯), হৃদয় (২৯), মো. মুরসালিন আহম্মেদ (১৮), মো. সবুজ মিয়া (১৮) ও নান্টু (৫২)।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারিন্দার কারখানাটিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে সাড়ে ৩ হাজার বোতল বিভিন্ন প্রকার মাদক মিশ্রিত পানীয় জব্দ করা হয়। এছাড়া এই পানীয় তৈরির কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ইয়াবার গুড়া, গাঁজা সাদৃশ্য বস্তু ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।

অভিযান শেষে মঙ্গলবার রাতে নারিন্দার ফকিরচান সর্দার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখা পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা বেশকিছু অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাই যে কামরাঙ্গীরচরে খোলা মোরা জায়গায় একটি দোকানে আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে এক প্রকার পানীয় বিক্রি করা হয়। তাদের ছেলেরা সেই পানীয়র প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এমনকি তা পান করার পর মাদকাসক্তদের মতো আচরণ করে।
অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-২ এর গোয়েন্দা দল গোপনে ওই আয়ুর্বেদিকের দোকান থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে এবং তা পরীক্ষাগারে পাঠায়। পরীক্ষার পর ওই পানীয়ের মধ্যে গাঁজা, ইয়াবা, ডান্ডি তৈরিতে ব্যবহৃত টলুইন নামক ‘ক’ শ্রেণির মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এছাড়াও তীব্র ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপকরণ, এসিড জাতীয় দ্রব্যসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায় এই পানীয়তে। এই পানীয় গ্রহণ করলে কিডনিসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-২ এর একটি দল রাজধানীর নারিন্দাতে অবস্থিত কারখানায় এবং কামরাঙ্গীরচর, কাঁটাবন, নাজিরা বাজার, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বিভিন্ন আউটলেটে অভিযান চালিয়ে আয়ুর্বেদিক/ভেষজ ওষুধের আড়ালে মাদক মিশ্রিত পানীয় উৎপাদন ও বিক্রির অভিযোগে এই ছয় জনকে আটক করে।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, তারা ফার্মেসির নামে লাইসেন্স নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির আড়ালে মাদক ও যৌন উত্তেজক দ্রব্যাদি মিশ্রিত পানীয় প্রস্তুত ও বিক্রি করে আসছিল। প্রতি বোতল পানীয়র দাম ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
আটকরা ২-৩ বছর ধরে এই পানীয় উৎপাদন ও বিক্রি করছিল। তারা রাজধানীর নারিন্দাতে অবস্থিত কারখানায় এই পানীয় উৎপাদন করে কামরাঙ্গীরচর, কাঁটাবন, নাজিরা বাজার, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন জায়গায় আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রি করত।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন আউটলেটে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ বোতল এই পানীয় বিক্রয় হতো বলে জানা যায়। আটকরা ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় বাসা পরিবর্তনের মাধ্যমে অবস্থান পরিবর্তন করতেন বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এমএসি/এমএইচএস