শক্তি ও স্বার্থ এক হলে দুর্নীতি দমন হবে : বিআইডিএস

শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি ক্ষমতা ও স্বার্থকে এক করতে হবে। ‘পাওয়ার, গভর্নেন্স এন্ড ভিজিবল এন্টি-করাপশন’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
বুধবার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সম্মে লন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করা হয়। বিআইডিএস কাজী আলী তৌফিক মেমোরিয়াল লেকচার উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন গবেষক লন্ডনের সোয়াস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মুশতাক হুসেন খান।
মুশতাক হুসেন খান বলেন, শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পাশাপাশি ক্ষমতা ও স্বার্থকে এক করতে হবে। তাহলেই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলেন, যদি সমাজে সবাই ক্ষমতাবান থাকে সে সমাজে একজন দুর্নীতি করতে পারে না। যেমন গুলশানে গাড়িতে উঠতে গিয়ে মানুষ লাইনে দাঁড়ায়। কেউ কাউকে টপকিয়ে সামনে যায় না। কেননা এখানে যে নিয়ম ভেঙে আগে যেতে চাইবে পরের জন তাকে টেনে পেছনে আনার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু গ্রামে যেখানে একজন ক্ষমতাসীন মানুষ লুঙ্গিপরা মানুষের আগে গেলেও তাকে কেউ বাধা দেবে না।
তিনি বলেন, দুর্নীতি আজ বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রচলিত ধারণা হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে দুর্নীতি কমে আসবে। এটি সামনে রেখেই দেশ-বিদেশে সব দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এতকিছুর পরও দুর্নীতি কমছে না বরং কোনো ক্ষেত্রে বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে আমি দেখিয়েছি শুধুমাত্র এ দুটি মাধ্যম দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি সমান পর্যায়ে নয়। কিছু ক্ষেত্রে ভালো কাজও হচ্ছে। এজন্য খাতভিত্তিক পর্যালোচনা করতে হবে। তারপরই দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। সমজাতীয় সমাজ প্রতিষ্ঠা করা গেলে দুর্নীতি থাকবে না। এছাড়া যদি দেখা যায় যারা শক্তিশালী এবং দুর্নীতি কমাতে চায় তাহলে তারা পারবে। কিন্তু যারা গরিব এবং শক্তিশালী নয় কিন্তু দুর্নীতি কমাতে চায় তারা সহজেই পারবে না বরং তাদের শেষ হতে দেওয়া হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা হয় দুর্বল, ক্ষমতা কম, না হয় তাদের স্বার্থ নেই। দুর্নীতি দমন তখই হবে যখন শক্তি ও স্বার্থ এক হবে।
তিনি বলেন, এখানে দুর্নীতি হচ্ছে তখন একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্বল বা গরিব এলাকাবাসী যদি এখানে প্রতিবাদ করে তাহলে কাজ ওইভাবে হবে না। নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও তানজানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গবেষণা পরিচালনা করে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, দুর্নীতি একটা ব্যাধির মতো হয়েছে। এটি দমন নয় বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সমাজের সবাইকে সমভাবে শক্তিশালী করাটা হয়ত দ্রুত সম্ভব হবে না। কিন্তু চেষ্টা থাকতে হবে। এজন্য নীতিমালাগত কিছু পরিবর্তন দরকার। দুর্নীতি বন্ধে রাজনৈতিক শক্তিসহ সব পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
এসআর/এসএম