হলিক্রস ছাত্রীর মৃত্যু : আজই মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে ডিআইএ’র প্রতিবেদন

হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হতে পারে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) ডিআইএ’র পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ মো. আজমতগীর ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা আজকের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছি।
একই কথা বললেন তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য শিক্ষা পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অলমোস্ট রেডি। আশা করছি আজই জমা দিতে পারব।
তদন্তের বিষয়ে কমিটির প্রধান ডিআইএ উপ-পরিচালক ড. রেহেনা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত সোমবার রাজধানীর চারটি স্কুলের উচ্চতর গণিত ও গণিতের শিক্ষক এবং বোর্ডের তালিকাভুক্ত ১২ পরীক্ষকের মাধ্যমে হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রীদের উচ্চতর গণিত খাতা পুনর্নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষকরা ফেল করার কারণ লিখিতভাবে আমাদের জানিয়েছেন। তারা কিছু কথাও বলেছেন, যা আমরা তাদের মতামত দিয়ে রেকর্ড করেছি। তার ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষক জানান, কোনো খাতায় ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কম নম্বর দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করায় বাবার মারধরের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে পারপিতা ফাইহা।
হলিক্রস শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি গঠন করে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। অপরটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক অফিসের।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক রবিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করে। ফেল করার কারণে ওই সময় ফাইহার বাবা তাকে মারধর করেন। দ্বিতীয় সাময়িকেও একই বিষয়ে ফেল করলে ক্লাস শিক্ষক তার বাবাকে স্কুলে আসতে বলেন। এতে ফাইহা ভয় পেয়ে যায়। সে কারণে স্কুল থেকে ফিরে পারপিতা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
এই তদন্ত কমিটি সরেজমিনে শিক্ষক, অধ্যক্ষ, গণিতের শিক্ষক ও পারপিতার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলেছে। এমনকি দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ফেল করা আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীর খাতা সংগ্রহ করে তা পুনর্মূল্যায়ন করেছে। তবে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়ন সঠিক ছিল বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পারপিতার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উচ্চতর গণিত শিক্ষক শোভন মার্টিন ডি রোজারিওকে শোকজ করা হয়। জবাবে শোভন রোজারিও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনই কোনো ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ বা প্ররোচিত করিনি। কোনো ছাত্রীকে উচ্চতর গণিতে এক নম্বর বেশি দেওয়া যায় না কমও দেওয়া যায় না। সুতরাং বেশি নম্বর দেওয়া বা কম দেওয়ার বিষয়টি একেবারেই বানোয়াট। পার্পিতাকে শ্রেণিতে আলাদা করে আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করিনি।
তবে, শিক্ষক শোভন রোজারিও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা বোর্ডের তদন্ত কমিটি। ওই শিক্ষক শুধু অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীই নয়, নিজ ক্লাসের শিক্ষার্থীদেরও বাসায় নিয়ে কোচিং করান। এ বিষয়টি স্বীকার করেননি স্কুলের শিক্ষকরা। তবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, হলিক্রস ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমরা এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করি। কমিটির সদস্য সরেজমিনে গিয়ে ক্লাস শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর তার পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে মৃত্যুর কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। মূলত পারিবারিক কলহের কারণে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
গত ২৩ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশন রোডের নন্দন রোকেয়া নামের ১২ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহা (১৪)। পরে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি। অভিযোগ উঠে পরীক্ষায় ফেলের অপমান সইতে না পেরে সে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
এএজে/এমএইচএস