মুশতাক আহমেদের মৃত্যু: কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কি না জানতে কমিটি

রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যুর ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। এ মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল কি না এবং থাকলে গাফিলতিকারীদের চিহ্নিত করতে কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ কমিটি গঠন করে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে আদেশ জারি করা হয়েছে। আগামী ৪ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. তরুন কান্তি শিকদারকে আহ্বায়ক করে এবং একই বিভাগের উপসচিব আরিফ আহমদকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (গাজীপুর) আবুল কালাম, কারা উপমহাপরিদর্শক (ময়মনসিংহ) মো. জাহাঙ্গীর কবির ও গাজীপুর জেলা কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. কামরুন নাহার।
আদেশে বলা হয়, হাজতি বন্দির (মুশতাক আহমেদ) মৃত্যুর বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য এ কমিটি গঠন করা হলো। কমিটিকে আগামী ৪ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
কমিটির কার্যবিধিতে বলা হয়, ‘উল্লেখিত (মুশতাক আহমেদ) হাজতি বন্দির মৃত্যুতে কারা কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার গাফিলতি ছিল কি না; যদি থাকে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা। এ বন্দি কারাগারে আসার পর তার কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ অবহিত ছিল কি না; যদি থাকে সে বিষয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না; যদি না হয়ে থাকে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা।’
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে মারা যান মুশতাক আহমেদ। কারা সূত্র জানায়, সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মুশতাককে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গত বছরের মে মাস থেকে কারাবন্দি ছিলেন মুশতাক। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
দেশে কুমির চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। থাকতেন ঢাকার লালমাটিয়ায়। তার সঙ্গে স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মাও থাকতেন। শুক্রবার সকালে তার মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে ২০২০ সালের ৫ মে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র্যাব। পরে রমনা থানায় মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে র্যাব তিনটি মামলা করে।
গত ১১ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
শতাকের দেহে মেলেনি আঘাতের চিহ্ন
কারাগারে মৃত্যুবরণ করা লেখক মুশতাক আহমেদের ময়নাতদন্ত শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় শেষ হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারের পক্ষ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা করা হয়েছে।
গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফী মোহাইমেন বলেন, ‘মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন তৈরির পর বিস্তারিত বলা যাবে।’
সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ বায়েজীদ বলেন, ‘সাড়ে ১০টার দিকে লেখক মুশতাক আহমেদের সুরতহাল করা হয়েছে। তার পিঠে যেকোনো সময় ‘ঘা’ হয়েছে এমন দাগ পাওয়া গেছে। ডান হাতে লালচে কালো ছোট দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে আনা বা গাড়িতে উঠানোর সময় এ দাগ হয়ে থাকতে পারে।’
হাসপাতাল মর্গে মরদেহের জন্য অপেক্ষমাণ লেখক মুশতাক আহমেদের আত্মীয় ডা. নাফিছুর রহমান বলেন, ‘তার মরদেহ আমি নিজে দেখেছি। কোনো সমস্যা চোখে পড়েনি। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন ছাড়া আমি এ ব্যাপারে কী বলব? আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমরা কোনো মামলাও করব না।’
এদিকে, কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ লেখকের মৃত্যু তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগে আন্দোলনও করেছেন। আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এছাড়া তিন জনকে আটক করা হয়েছে।
এসএইচআর/জেডএস