সাঁওতালদের ভূমিতে স্বপ্নপুরী স্থাপনের অভিযোগ এমপি শিবলীর বিরুদ্ধে

দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেন সাঁওতালদের ভূমি দখল করে স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন এবং সাঁওতাল ও মাহালিদের সমাধিক্ষেত্রের ওপর বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ করেছেন সাঁওতালরা। জমি ফেরত চাওয়ায় তাদের জীবননাশের হুমকি আসছে উল্লেখ করে ভুক্তভোগীরা জীবনের নিরাপত্তা ও জমি ফেরত চান।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ি, জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন নামের একটি সংগঠন। তারা দিনাজপুর-৬ আসনের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার স্বপ্নপুরী বিনোদন কেন্দ্রটি তাদের পূর্বপুরুষদের জমি দখল করে করা হয়েছে। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিনোদন কেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালি সম্প্রদায়ের ৩টি সমাধিক্ষেত্র আছে। একটি সমাধিক্ষেত্রের ওপর এমপি শিবলী বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করছেন।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী বিশুরাম মরমু বলেন, বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয় এ বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু এ স্বপ্নপুরী শত শত সাঁওতালের জীবনের স্বপ্ন আর আশা-আকাঙ্ক্ষা কেড়ে নিয়েছে তা কেউ জানে না। সমাধিক্ষেত্রের ওপরে গড়ে ওঠা বিলাসবহুল বাড়িটি প্রতিনিয়ত সাঁওতাল সম্প্রদায়কে কষ্টের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে রাখে।
আমরা সাঁওতাল ও মাহালি জনগোষ্ঠীর মানুষ এই ভূখণ্ডের সকল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কিন্তু আমাদের জীবন, সম্মান ও সম্পদের ওপর আক্রমণ তো কমছেই না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েই চলেছে। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। বিভিন্নভাবে তাদের উচ্ছেদ কারা হচ্ছে, জমি হারাচ্ছে- এমন কি জমি রক্ষা করতে গিয়ে জীবনও দিতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী সাঁওতালদের দাবি, জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সাঁওতালদের পূর্বপুরুষের জমি-জমা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমপি শিবলী সাদিক ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেন একজন ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতা। তারা দুজন মিলে বিশাল এক বাহিনী লালন-পালন করেন। তারা সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। শুধু সাঁওতালদের জমিই না, বন বিভাগেরও বিপুল পরিমাণ জমি তারা আত্মসাৎ করেছেন বলে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী গণেশ হেমব্রম বলেন, আমার জমির ওপরে ওরা ময়লা ফেলে। আমার বাপ-দাদা কেউই তাদের কাছে জমি বিক্রি করেনি। তাও তারা একই কথা বারবার বলে। এক জমি আমরা কয়বার বিক্রি করছি তাহলে? গ্রামের মানুষ ভয়ে কথা বলে না। আমার বাপ দাদার জমি আমি ফেরত চাই।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, শায়খুজ্জামান বাদশা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উকিল হেমব্রমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সাঁওতাল অধিবাসী গনেশ হেমব্রম, রবেন মার্ডি, খুকুমনি হেমব্রম, অখিল হেমব্রম, লুইস হাসদাসহ আরও অনেকে।
আইবি/ওএফ