রেলওয়ের নিয়োগবিধি সংশোধনের দাবি

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেছেন, রেলওয়ের নিয়োগ বিধিমালা ২০২০ সংশোধন নিয়ে বারবার রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত না করে স্বৈরাচারিভাবে ত্রুটিপূর্ণ নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। রেলমন্ত্রী কার স্বার্থে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনিয়মের প্রতিবাদে রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। মানববন্ধন শেষে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, রেলওয়ে ক্যাডার বহির্ভূত কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এই নিয়োগবিধি মূলত রেলওয়ের কর্মচারী ও পোষ্যদের অধিকার বঞ্চিত করার এক ঐতিহাসিক দলিল। নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সর্বকালের সেরা স্বৈরাচারিতামূলক ও নোংরা হাতে নিয়োগ বাণিজ্য সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রণীত একটি বিধিমালা। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েতে ঘাপটি মেরে বসে থাকা চক্র দ্বারা সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ণ এবং রেলওয়ের কর্মচারী ও পোষ্যদের অধিকার বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন: প্রাণ ফিরেছে এক ডেমুর, ১৪টি অনুমোদনের অপেক্ষায়
মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পদোন্নতি যোগ্য পদে পদোন্নতি বন্ধ, অনুমোদিত জনবলের বিভিন্ন পদে আউটসোর্সিংয়ের নামে পকেট সোর্সিং চালুর ষড়যন্ত্র, কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীর পোষ্যদের সরাসরি নিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি, সরাসরি ও পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগে মহাপরিচালক ও মহাব্যবস্থাপকের ক্ষমতা খর্ব করা এবং নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সংশোধনের নামে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ হালনাগাদ বা সংশোধনে গঠিত কমিটি কর্তৃক সংশোধন না করে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখার কারণে রেলওয়ে কর্মচারী ও পোষ্যদের মধ্যে চরম হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ রেলওয়ের প্রচলিত বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির আট দফা দাবি হলো—
১. নিয়োগ বিধিমালা-২০২০ সংশোধনপূর্বক রেলওয়ে কর্মচারীবান্ধব নিয়োগবিধি প্রণয়ন এবং প্রতিটি রেল কর্মচারীর পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন পোষ্যর চাকরি নিশ্চিতকরণ।
২. প্রকাশিত ৮৬৫ জন খালাসী ও ১১১৩ জন ওয়েম্যানের ফলাফল থেকে অধিকার বঞ্চিত আন্দোলনরত রেলওয়ে পোষ্যদের নিয়োগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের নামে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল করে করতে হবে। সকল প্রকার আউটসোর্সিংয়ের নামে পকেটসোর্সিং বন্ধ করতে হবে।
৪. রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও রেলওয়ে পোষ্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নানামুখী প্রকল্পের মাধ্যমে পোষ্যদের বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তি দিতে হবে।
৫. অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের ফাইনাল সেটেলমেন্টের কাজ সরকার নির্ধারিত দুই মাস সময়ের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এর স্থলে ৩২ বছর করার দাবি।
৬. নিয়োগ, ক্রয়, ঠিকাদারি কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সকল প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম কর্তৃক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭.রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী ও পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে রেলওয়ে হাসপাতালসমূহে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৮.অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের আবাসনের জন্য ১০ শতাংশ করে পরিত্যক্ত রেল ভূমি লিজের মাধ্যমে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মানববন্ধন বক্তব্য রাখেন রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির উপদেষ্টা আব্দুর রাজজাক মল্লিক, চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সাইদুজ্জামান শিপন, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম ঠাকুর প্রমুখ।
আইবি/এসএসএইচ