সড়কে বড়-বড় গর্ত, হেলেদুলে চলে গাড়ি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলা পর্যন্ত সড়কের দুইপাশেই বেহাল দশা। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ পথে ঝুঁকি নিয়ে অনেকটা হেলেদুলে চলতে হয় যানবাহনগুলোকে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভোগান্তি থেকে বাঁচতে আরও কয়েকমাস অপেক্ষা করতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলা পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে বিভিন্ন জায়গায় কার্পেটিং, পিচ, পাথর এবং সুরকি উঠে গেছে। সময়মতো সংস্কার না হওয়ায় এ রাস্তা এখন মানুষের দুর্ভোগের অন্যতম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলাচলকারী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। এ সড়কে গাড়ি চলাচলের সময় যাত্রী এবং চালকরা থাকেন আতঙ্কে।
আরও পড়ুন : মরণ ফাঁদের নির্মাণকাজ
আমির মিয়া নামে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের একজন বাস চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে এটি ঢাকায় ঢোকার মূল রাস্তা। কয়েক বছর ধরেই দেখছি, রাস্তাটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। বড়-বড় গর্তের কারণে বাস চালাতে আমাদের বেগ পেতে হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে বাসের ১২টা বেজে যায়! এটা দেখার কেউ নেই? নাকি কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান ধরে?
তিনি আরও বলেন, রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে গাড়িগুলো অনেক স্লো (ধীর) চলে। এজন্য জ্যাম (যানজট) লেগেই থাকে। বিশেষ করে সকাল এবং সন্ধ্যার দিকে এ জ্যাম বেশি লাগে। কখনো-কখনো অবস্থা এমন হয় যে, জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। এতে আমাদের সময়ের অপচয় হয়।

কাজলায় কথা হয় একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। কামাল নামে ওই শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। বড়-বড় গর্তের কারণে বাস হেলেদুলে চলে। অনেক ভয় পাই, কখন জানি উল্টে যায়। এছাড়া বৃষ্টি হলে গর্তগুলোতে পানি জমে যায়। এতেকরে দুর্ভোগ আরও বাড়ে। মাঝে-মধ্যে মালামালসহ রিকশা-ভ্যান উল্টে যায়।
যাত্রাবাড়ীতে মাছ, কাঁচামাল এবং ফলের বড় আড়ৎ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পণ্য নিয়ে আসে এসব আড়তে।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রাকে করে কাঁচামাল নিয়ে ঢাকায় এসেছেন আনোয়ার মিয়া নামে এক চালক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাস্তার এমন দুর্দশা হলে যত ভালো চালকই হোক না কেন, রিস্ক (ঝুঁকি) থাকেই। বড় গর্তের কারণে ট্রাক কাত হয়ে যায়। খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এ রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।
আরও পড়ুন : যানজটে স্থবির ঢাকা : সমাধান কোথায়?
শামীম নামের যাত্রাবাড়ীর একজন আড়ৎদার বলেন, এটি এখন যেন একটি অভিশপ্ত রাস্তা, চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর এ বেহাল দশা। রাস্তাটি অনতিবিলম্বে সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে কাজলা পর্যন্ত সড়কটি পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এ বিষয়ে জানতে এ ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুকে ফোন করা হলে তিনি সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সড়ক সংস্কারের জন্য নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া করা হয়েছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন : এই মৃত্যু উপত্যকাই আমার দেশ!
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় ঢাকা পোস্টকে জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য কার্যক্রম চলমান আছে। সংস্কার কাজ শুরু হতে আনুমানিক ২ মাস সময় লাগতে পারে।
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী গোল চত্বর থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের দ্বিতীয় টোলপ্লাজা অর্থাৎ কাজলা পর্যন্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫০ মিটার রাস্তা। দুই পাশেই খারাপ অবস্থা। এটা আমাদের মেয়র মহোদয় পরিদর্শন করার পর ডিজাইন করে নথি উপস্থাপন করেছি। মেয়র ইতোমধ্যে আর্থিক অনুমোদন দিয়েছেন। এখন দরপত্রের প্রক্রিয়ায় যাবে। এরপর কাজ শুরু করবো।
কাজ শুরু হতে কতদিন লাগবে? জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করা যাবে বলে আমরা আশা করছি। যেহেতু এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, একেবারে বন্ধ করে কাজ করা যাবে না। এ কারণে কাজ শেষ হতে হয়তো একটু সময় লাগবে। কাজটি শেষ হলে মানুষ স্বস্তি পাবে। আপাতত আমরা বড়-বড় গর্ত যেগুলো হয়েছে, সেগুলোতে ইট দিয়ে গাড়ি চলাচল অব্যাহত রেখেছি।
এসএইচআর/এসএম
