বেরোবির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আমি কোনো প্রতিবাদ করিনি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পর আমি অনেকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছি। কিন্তু কখনও প্রতিবাদ করিনি। কারণ আমার মনে হয়েছে আমি যত বেশি আলোচনায় থাকব, তত বেশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিংয়ের অংশ হিসেবে সবসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিতাযুক্ত আইডি কার্ড পরিধান করি। অনেকেই এটা নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। আমি কিন্তু উপভোগ করেছি।
বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কলিমউল্লাহ বলেন, ‘আমার পরিচিত সবাই জানেন, আমি একজন কাজ পাগল মানুষ। দায়িত্বে অবহেলা আমার চরিত্রে নেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য দৈনিক ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা কাজ করি। মাত্র দুই ঘণ্টা ঘুমাই। মূলত ক্যাম্পাসকে আলোচনায় রাখাই আমার দায়িত্ব। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন আমি বেরোবির উপাচার্য। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, উপাচার্যের পদ আবাসিক নয় রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব আবাসিক।’
বেরোবি উপাচার্য বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমাকে পাওয়া যায় না, আমি নিখোঁজ হয়ে যাই, আমি ঢাকায় থাকি। অথচ আমি প্রতিদিন ২০/২২ ঘণ্টা কাজ করি। ঢাকায় থাকলে লিয়াঁজো অফিসে কাজ করি। রংপুরে থাকলে বাসায় থেকে কাজ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাভাবিকভাবেই সব চলছিল। কিন্তু মিথ্যা ও অসংলগ্ন যেসব তথ্য সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
কলিমউল্লাহ বলেন, আমি রংপুরে ভোট করতে যাইনি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করেছি। এর মধ্যে পত্রপত্রিকায় কী লিখল, কে কী বলল এগুলো আমলে নেইনি। একাধিকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করিনি। কারণ আমার মনে হয়েছে আমি যত বেশি আলোচনায় থাকব তত বেশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি বাড়বে।
ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, সংসদে পাস করা যে আইনটি আছে সেখানে স্পষ্ট বলা আছে, কেবল রেজিস্ট্রার সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করবেন। এখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হবে এরকমটি বলা নেই। আমি সংসদে যে আইন সে অনুযায়ী চলেছি, আমার জানা মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দেশের মধ্যে ছুটির জন্য কোনো অনুমতি প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, অপরাজনীতি করার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয় নয়। হয়ত শিক্ষামন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করেন। সেজন্য আমাকে নিয়ে এসব করছেন। আর আমি যা করি সবই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে করি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমি ঢাকায় অবস্থান করছি এবং এখানে সিন্ডিকেট মিটিং করে থাকি। ক্যাম্পাসে না থাকা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। কিন্তু সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ রয়েছে এমনটা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা সাংঘর্ষিক।
আপনি পদত্যাগে ইচ্ছুক কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রপতির আদেশে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এসেছি। তার আগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছা আমার নেই। আমি বিতর্কের কিছুই করিনি।
ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ইউজিসি এ দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এ কমিশন এ অবস্থায় পৌঁছেছে দুঃখজনক। আমি এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তিনি বলেন, ইউজিসির ইন্টেগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয় ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়াটিকে একটি দেউলিয়া করে দিয়ে গেছেন। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো পবিত্র একটি জায়গায় এটা মানানসই না। শিক্ষামন্ত্রীর এ পবিত্র পদে থাকা কাম্য নয়।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। উপাচার্য বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনো আমরা পাইনি। এর আগেই গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এনএম/জেডএস