জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংসদে পরিবেশমন্ত্রীর উদ্বেগ

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এখনই ব্যাপকভাবে পদক্ষেপ না নিলে হুমকিতে পড়বে বিশ্ব।
বুধবার (২ নভেম্বর) ঢাকা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয় বিকেল সাড়ে চারটায়।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে খুব দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দশকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শিল্প-বিপ্লবের সময়ের আগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা ২১০০ সাল নাগাদ ৩ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি বেড়ে যেতে পারে। এর ফলে দিন দিন আবহাওয়া আরও বিপজ্জনক আচরণ করবে, সামুদ্রিক ঝড় বেশি হবে, জলোচ্ছ্বাস বাড়বে, সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ দশমিক ১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
টেবিলে উপস্থাপিত সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম লুৎফুন নেসা খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শব্দদূষণ মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার জন্য সরকার থেকে তিনটি সংস্থার কাছে ২৩০টি সাউন্ড লেভেল মিটার বিতরণ করা হয়েছে। সংস্থা তিনটি হলো- বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পরিবেশ অধিদপ্তর ও এর বিভিন্ন কার্যালয়।
সংসদ সদস্যের সংশ্লিষ্ট একই প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, শব্দদূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা। তাই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলকে নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিল্প এলাকা এই পাঁচ শ্রেণিতে ভাগ করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একই পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ জারি করা হয়েছে। কিন্তু শব্দদূষণ ও এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে মানুষ হরহামেশাই উচ্চমাত্রার শব্দ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সে কারণে ৬৪ জেলায় দুই হাজার অংশীজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও শব্দমাত্রা রেকর্ড সংক্রান্ত জরিপ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের এক প্রশ্নের জবাবে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ, পরিবেশগত মান উন্নয়ন, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমনকল্পে গৃহস্থালির বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সরকার বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ প্রণয়ন করেছে। এই বিধিমালায় পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার বন্ধে স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন পুরুত্বের পলিথিন উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ বা সীমিতকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট ও এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
এসআর/কেএ