পিএসসিতে ‘লাল ফিতায় বাঁধা কোর্ট ফাইল’ নিয়ে প্রতিবাদ

লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা কোর্ট ফাইল নিয়ে আন্দোলন করছেন ৪০তম বিসিএস উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছয় দফা দাবি নিয়ে টানা ১০ম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন নিয়ম প্রণয়ন করায় তারা এ বিধিকে ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য’ হিসেবে প্রতীকী আন্দোলন করছেন।
বুধবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) গেটে মিছিল, কবিতা, গান ও বক্তৃতার মাধ্যমে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এর আগে দুর্নীতিবিরোধী শপথ পাঠ, মোমবাতি প্রজ্বলন, দড়িতে মুলা ঝুলানো, পিএসসির সামনে পরিষ্কার অভিযান, সাদা মুখোশ পরিধান ও কালো চশমা পরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। তবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১০ম দিন চললেও পিএসসি থেকে দায়িত্বশীল কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী কয়েকজনের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের কথা হলে তারা জানান, আমরা লাগাতার ১০ দিন ধরে ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পিএসসির কোনো প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। আমাদের আন্দোলন বা দাবি নিয়ে যেন তাদের মাথা ব্যথা নেই। পিএসসি সবকিছু জেনেও চোখে কালো চশমা দিয়ে বসে আছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেও যেহেতু কোন সমাধান আসছে না সেহেতু সামনে পিএসসি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করার কর্মসূচি আসতে পারে। আমাদের দাবি মানতেই হবে।

তারা জানান, পিএসসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও কীভাবে বিধির দোহাই দেয় আমরা বুঝতে পারছি না। এখানে অনেকেই এক একটি স্বাধীন দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এমন আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।
এসময় আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশীরা ‘কালো বিধির কালো হাত ভেঙ্গে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দুর্নীতির কালো হাত ভেঙ্গে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লাল ফিতার কালো হাত ভেঙ্গে দাও-গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্য মানি না মানবো না’ ইত্যাদি স্লোগানে মিছিল করেন।
এদিকে গত (৩১ অক্টোবর) পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন অফিস শেষ করে বের হলে আন্দোলনকারীরা তার গাড়ি অবরুদ্ধ করে শুয়ে পড়েন। পরে আন্দোলন সমন্বয়কদের সিদ্ধান্তে চেয়ারম্যানের গাড়ি বের হতে দেওয়া হয়।
প্রার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো, যেহেতু বিজ্ঞপ্তিতে ৪০-৪৩তম বিসিএস পর্যন্ত নন-ক্যাডার পদের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি, সেহেতু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক বিজ্ঞপ্তির পর ৪০-৪৪তম বিসিএস পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারী নন-ক্যাডার পদ বিভাজনের মাধ্যমে পদ সংখ্যা নির্ধারণের এ বেকার বিরুদ্ধ ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তির তারিখওয়ারী পদ বিভাজনের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারের পদ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম
বিসিএসকে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং তারিখওয়ারী পদ বিভাজনের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ইতিহাসের দীর্ঘকালীন ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা প্রার্থীদের থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থীকে নন-ক্যাডারে সুপারিশ করাতে হবে।
যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পিএসসি ২৯ মার্চ ২০২২ তারিখ পর্যন্ত ৩৪-৩৮তম বিসিএস নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশ করেছে সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বর্তমান বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশের শিক্ষিত ও মেধাবী ছাত্রসমাজকে পিএসসির মূল বক্তব্য আড়াল করে অর্থাৎ যার যা প্রাপ্য তাকে তাই দেওয়া হবে এই ভিত্তিহীন কথা বলে যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং বেকার সৃষ্টির এই অপপ্রয়াস অনতিবিলম্বে বন্ধ করে বেকারবান্ধব নীতি নবায়ন করতে হবে।
বিগত এক যুগে পিএসসি যে স্বপ্ন, নির্ভরযোগ্য ও বেকারবান্ধব প্রতিষ্ঠান ছিল সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
এমএম/এসএসএইচ