ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য ইইউ’র ৩ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা ঘোষণা

ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের জন্য তিন মিলিয়ন ইউরো সহায়তা ঘোষণা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইয়ালভা জোহানসন এ ঘোষণা দেন।
রাজধানীর গুলশানে ইউরোপিয়ান কমিশন ডেলিগেশন প্রধানের দূতাবাস ভবনে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার আজ সকালে দুই দিনের সফরে (বৃহস্পতি ও শুক্রবার) বাংলাদেশে এসেছেন।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় তিন মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেবে। এটা শুনে আমরা খুশি হয়েছি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদেরও তারা সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছে।
এনামুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারে যখন সংঘাত শুরু হয় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যদি বাংলাদেশের মানুষ খেতে পায়, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সেই খাবার ভাগাভাগি করে খাবে। সেজন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে মানবতার জননী উপাধি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে সহিংসতা ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।’
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভাসানচরের রোহিঙ্গাদের পুষ্টির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। প্রথম দিকে যে পুষ্টি পরিস্থিতি ছিল, এখন কক্সবাজার ও ভাসানচরে সেই অবস্থা থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে।’
ইউএনএইচসিআরের স্বাগত
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ৩ মিলিয়ন ইউরোর সহায়তার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআর।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ইউএনএইচসিআরের ঢাকা অফিস থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ইইউ’র এ অনুদানের ঘোষণাকে স্বাগত জানানো হয়।
বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কমিশনার ইলভা জোহানস দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে এ অনুদানের ঘোষণা দেয়। এ সময় ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান ইটা শুয়েত উপস্থিত ছিলেন।
সংস্থাটি জানায়, ইইউ’র এ অনুদান শরণার্থীদের, বিশেষ করে শিশু ও ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা বা যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষা এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মতো প্রধান কিছু কর্মকাণ্ডে সহায়ক হবে। এছাড়া শরণার্থীরা মনোসামাজিক সাহায্য ও মারাত্মক অপুষ্টি প্রতিরোধমূলক সেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। এর মাধ্যমে শরণার্থীদের পক্ষে জবাবদিহিতামূলক তথ্য পাওয়া আরও সহজ হবে, এবং ভাসান চরে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে।
ইউএনএইচসিআরের ইটা শুয়েত বলেন, ইইউ’র এ অবদান আমাদের ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও মানবিক সহায়তা প্রদান করতে সাহায্য করবে। তারা যেন নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে এবং একটি টেকসই সমাধান অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থবহ জীবন যাপন করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রকল্পের সহায়তায় জাতিসংঘ ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা প্রদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিয়মিত ও উদার সহায়তা সব সময়ই অমূল্য।
ইইউর কমিশনার ইলভা ইয়োহানসন বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের চলমান সমর্থনে আমি মুগ্ধ। বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেমন এই বছর সরাসরি হুমকিতে থাকা ৪ মিলিয়ন (৪০ লাখ) ইউক্রেনীয়কে আশ্রয় দিয়েছে, বাংলাদেশও ঠিক তেমনি তার সীমান্তে নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে ইইউ ও বাংলাদেশ একই মূল্যবোধে বিশ্বাসী, এবং কাজের মাধ্যমেই তা প্রমাণিত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, আমি খুবই আনন্দিত যে ভাসানচরে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক সহায়তা হিসেবে ৩ মিলিয়ন ইউরো দিচ্ছে। ইইউ সবসময় বাংলাদেশের একটি ভালো অংশীদার। তাদের এই সময়োপযোগী মানবিক সহযোগিতার জন্য আমি সত্যিই তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি মনে করি এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
এসএইচআর/এনআই/এমএইচএস/