সমুদ্র নিরাপত্তায় ২০০ নৌচালককে আইওএম’র প্রশিক্ষণ

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ২০০ নৌযান চালককে ‘সমুদ্রে নিরাপত্তা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন ও সরকারের অন্যান্য সংস্থার সমন্বয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটের এসব চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
দাতা সংস্থা ব্যুরো অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিসট্যান্সের (বিএইচএ) সহযোগিতায় ৫ ও ৬ মার্চ মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটটি এ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটক ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা রুটটি ব্যবহার করে মহেশখালী ভ্রমণ করেন। অন্যদিকে কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ডের মতোই মহেশখালী দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে, এ দ্বীপের প্রায় তিন লাখ বাসিন্দার মধ্যে এক লাখ বাসিন্দাই ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন।
অনুষ্ঠানে মহেশখালী আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আশেক উল্লাহ রফিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী সমুদ্রপথটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র সুরক্ষায় আমাদের নৌচালকদের সংবেদনশীল করার এ উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আইওএম মহেশখালীর নানামুখী উন্নয়নে ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতায় কাজ করছে। আমরা আশা করছি, এ প্রত্যন্ত দ্বীপের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও জরুরি ক্ষেত্রে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহফুজুর রহমান আইওএম-এর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মহেশখালীতে আইওএম-এর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো অজানা নয়। এ ধরনের সহযোগিতার ফলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা উপকৃত হচ্ছেন। তারা বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় দুর্যোগজনিত ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে উপকৃত হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা সামগ্রীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, আইওএম সেগুলোও আমাদের সরবরাহ করেছে।
প্রশিক্ষণে উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং উপকূলরক্ষীরাও অংশ নেন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে দুটি ব্যাচে প্রতিদিন ১০০ জন অংশ নেন। পাশাপাশি মহেশখালীর উপজেলা ও ইউনিয়ন ডিএমসির সদস্যরাও প্রশিক্ষণে অংশ নেন। প্রশিক্ষণ মডিউল শেষ করার পর আইওএম নৌচালকদের সমুদ্র সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
অনুষ্ঠানে আইওএম কক্সবাজার কার্যালয়ের ট্রানজিশন অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর প্যাট্রিক শেরিগনন বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে কয়েকশ নৌ-চালক কর্মরত আছেন। কিন্তু সমুদ্রে সুরক্ষার বিষয়ে তাদের এখনও পর্যন্ত কোনো যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এ ধরনের জীবনরক্ষামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকলাপে তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। আমরা আশা করি, এ উদ্যোগটি কেবল জীবনই রক্ষা করবে না, বরং দ্বীপের পর্যটন খাতের জন্যও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
প্রশিক্ষণে নৌচালকদের সমুদ্রে সুরক্ষা সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার, দুর্যোগকালীন ঝুঁকি হ্রাস, মৌলিক অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ, প্রাথমিক উদ্ধারকাজ, প্রাথমিক উদ্ধার ব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় শুরুর সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আচরণে পরিবর্তন যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন ধারণা দেওয়া হয়। এছাড়া সমুদ্র সুরক্ষার সরঞ্জাম (লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, রেডিয়াম স্টিকার, পাওয়ার ব্যাংক এবং টর্চ লাইট) কীভাবে চালাতে হয় তাও শেখানো হয়।
প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া নৌচালক রাজন বলেন, আজ আমি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছি। এ প্রশিক্ষণ আমার প্রতিদিনের কাজে সহায়ক হবে। এখন থেকে আমি আরও অনেক আত্মবিশ্বাসী যে সমুদ্র ভ্রমণের সময় আমি নিজেকে এবং আমার যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।
এআর/এসএসএইচ