এশিয়ার ‘রাইজিং স্টার’ বাংলাদেশ, অস্ত্র বিক্রি করতে চায় তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান আগামী বছর বাংলাদেশ সফরে আসবেন বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু।
‘বাংলাদেশ এশিয়ার রাইজিং স্টার’ আখ্যা দিয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর কথা বলেন। সাভাসগলু বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে এখন এক বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়। আমরা আগামীতে তা দুই বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চাই।’
তিনি বলেন, তার দেশ সামরিক সরঞ্জাম ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে তুরস্ক পাশে থাকতে চায়। তুরস্ক এদেশে এলপিজি গ্যাস, হাসপাতালে বিনিয়োগ এবং আইটি খাতে একসঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছে।’
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় সফররত তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফর করবেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত সেপ্টেম্বরে আঙ্কারায় নির্মিত বাংলাদেশের চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করতে তুরস্ক যান। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য খুব বড় বোঝা। তুরস্ক রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তুরস্ক চায় রোহিঙ্গাদে নিরাপদে ও সম্মানের সঙ্গে তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাক।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলিত সাভাসগলু
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে তুরস্ক মিয়ানমারকে চাপ দেবে বলেও জানান সাভাসগলু।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে তুরস্কের অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাভাসগলু বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের যেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে সেটা নিয়ে আমি খুব একটা বলতে পারব না। তবে সেখানে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর ক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিশেষ করে শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে এটা করা উচিত।’
কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিরাপদ আশ্রয় দিতেই ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয় করে ভাসানচরে স্থাপনা নির্মাণ করে সরকার। পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা এই দ্বীপে অনেক আগে থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে গত ৪ ডিসেম্বর স্থানান্তরের প্রথম ধাপে উখিয়ার কয়েকটি ক্যাম্প থেকে বাসে ও জাহাজে করে দুই হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গার একটি দলকে সেখানে পাঠায় সরকার।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অনেক আলোচনা হয়েছে। তুরস্ক বলেছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে থাকবে। তারা মিয়ানমারকে চাপ দেবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাভাসগলু দুদিনের সফরে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন। সফরের প্রথম কর্মসূচিতে সাভাসগলু ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি জাদুঘরে সম্মান জানান। এরপর সেখান থেকে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বুধবার বিকেলে ঢাকায় নতুন করে নির্মিত দূতাবাসের উদ্বোধন করবেন সাভাসগলু।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে তুরস্ক। বাংলাদেশ চাইলে সামনে আরও ওষুধ ও মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে বলে জানান তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এনআই/এইচকে