রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনায় মোমেন

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লজ্জা হয় উচিত। কেননা তারা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে কিছুই করছে না। অথচ তারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে।’
সোমবার (০৮ মার্চ) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) আয়োজনে ‘কূটনীতিতে নারী' শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে এমন সমালোচনা করেন মন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা যথেষ্ঠ নয় যে কয়েকজন সেনাপ্রধানের নিষেধাজ্ঞা দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারা মিয়ানমারে তাদের ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। গণহত্যার পরও গত চার বছরে মিয়ানমারে তাদের ব্যবসা ও বিনিয়োগ চারগুণ বেড়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। আমি খুব অবাক হচ্ছি, একটা দেশ গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করার পরও সেখানে কীভাবে ব্যবসা-বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে? তারা তাদের সঙ্গে সব ধরনের সংযোগ স্থাপন করে আছে।’
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে কিছুই করছে না। তাদের উচিত মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের উপযুক্ত জীবন নিয়ে তর্ক করা। রোহিঙ্গারা কুতুপালং না ভাসানচরে থাকবে সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় হচ্ছে, তাদের অবশ্যই দেশে ফিরে যেতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা, এদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী। আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের এখন তাদের জন্য কিছু করা দরকার। তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়তা করা দরকার। আমি খুবই হতাশ হচ্ছি, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তাদের জীবন ক্রমেই হতাশার দিকে যাচ্ছে। তাদের এই অবস্থার জন্য সবার লজ্জা হওয়া উচিত।’
মিয়ানমারকে উদ্দেশ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের উচিত এখনই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া। রোহিঙ্গাদের অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে মিয়ানমারকেই উপযুক্ত জীবন দিতে হবে।’
প্রত্যাবাসনে এখনও কোনো ভূমিকা না রাখতে পারায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোরও সমালোচনা করেন মোমেন।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশকে স্টার অ্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়ে গেছে। সুসংবাদ হচ্ছে, সব সেক্টরেই নারীর পদচারণা বাড়ছে। আমাদের এখন আটজন রাষ্ট্রদূত রয়েছেন নারী। তারা তাদের যোগ্যতায় এসেছেন।’
সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানো প্রসঙ্গে মোমেন বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে নারীদের সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। অনেক মানবাধিকার সংগঠন ও আপনারা মিডিয়া বলেন, নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ করতে; এটাতো আমরা বন্ধ করতে পারি না। আর নির্যাতনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা খুবই কম। তবে আমরা চাই না আমাদের কোনো নারী বিপদে পড়ুক। তারা যেন বিদেশ গিয়ে ভালো থাকতে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
অনুষ্ঠানে ডিক্যাবের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব মাশফি বিনতে শামসকে সফল কূটনীতিক সম্মাননা দেওয়া হয়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব মাশফি বিনতে শামস, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেকজেন্ড্রা বার্গ ভন লিন্ডে, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি চার্ড ও মালদ্বীপের হাইকমিশনার সিরুজিমাথ সামির বক্তব্য রাখেন।
এনআই/জেডএস