ভোগান্তি কমিয়েছে টঙ্গী ফ্লাইওভার, গলার কাঁটা স্টেশন রোড মোড়

বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অংশের ঢাকামুখী দুটি লেন গত ৬ নভেম্বর খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে ওই অংশে যানজট অনেকটাই কমে এসেছে। টঙ্গী স্টেশন রোড মোড় পার হতে পারলে এখন উত্তরার আজমপুর মোড়ে আসা যায় মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটে। তবে বর্তমানে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়। এই মোড়টি পাড়ি দিতে দীর্ঘসময় ব্যয় করতে হচ্ছে ঢাকামুখী যানবাহনকে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল মহাসড়কের সংযোগস্থল হলো টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়। ময়মনসিংহ ও ঘোড়াশাল থেকে আসা যানবাহনগুলো এই মোড়ে এসে ঢাকামুখী হয়। মোড়টি পার হতে পারলে মাত্র পাঁচ মিনিটেই প্রবেশ করা যায় ঢাকা শহরে। তবে এই মোড় পার হতেই এখন যত বিপত্তি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার দুই পাশে এবং মাঝে বিআরটি প্রকল্পের কাজ কাজ চলছে। কোথাও পিলার তৈরির জন্য রাস্তা কাটা হয়েছে, আবার কোথাও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি দুই লেনের সড়কে পরিণত হয়েছে। একে তো লেন মাত্র দুটি, তার ওপর প্রকল্পের মালামাল সরাসরি রাস্তার উপর লং ভেহিক্যাল (৩৫-৪০ ফুট) থেকে নামানো হয়। ওই মালামাল নামানোর সময় রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ থাকে। যার ফলে রাস্তায় ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বাড়তেই থাকে।
টঙ্গী স্টেশন রোড মোড় পার হতে পারলে এখন উত্তরার আজমপুর মোড়ে আসা যায় মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিটে। তবে বর্তমানে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়। এই মোড়টি পাড়ি দিতে দীর্ঘসময় ব্যয় করতে হচ্ছে ঢাকামুখী যানবাহনকে
অন্যদিকে টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল মহাসড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করা হচ্ছে না। তবে সংযোগস্থল টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়ে বিআরটি প্রকল্পের কাজের লং ভেহিক্যালগুলো ঘোরানো হয়। সেখানে লং ভেহিক্যাল ঘোরানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যার কারণে অনেকটা বেগ পেতে হয় এবং দীর্ঘসময় যান চলাচল করতে পারে না। ফলে যানজট লেগে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের।
আরও পড়ুন : দেশের প্রথম বিআরটির কিলোমিটারে ব্যয় ২০৮ কোটি টাকা

ফ্লাইওভার ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গী ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী দুটি লেন এসে নেমেছে উত্তরার আজমপুর মোড়ের কাছে। সেখানে নামার পর যদি এয়ারপোর্ট মোড় থেকে কোনো যানজট তৈরি না হয় তাহলে অনায়াসে গাড়িগুলো ঢাকা শহরে প্রবেশ করতে পারে।
এই পথের যানবাহনের চালকরা ফ্লাইওভারটিকে আশীর্বাদ বলে মন্তব্য করছেন। তারা বলছেন, কিছুদিন আগেও টঙ্গী স্টেশন রোড মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর পার হয়ে আজমপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার পথ আসতে তাদের অন্তত আধা ঘণ্টা লেগে যেত। এখন তারা কয়েক মিনিটে সেটি পার হতে পারছেন।

ঢাকা-ময়মনসিংহ-জামালপুর রোডের বাসচালক মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারের এই কাজের জন্য আমাদের কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে পুরো কাজটি শেষ হলে নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, টঙ্গী থেকে আব্দুল্লাহপুর রোডে সবসময় যানজট লেগে থাকত, এটা আমরা অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। তবে ফ্লাইওভার খুলে দেওয়ার পর থেকে আর আগের মতো যানজট লাগে না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটি দুই লেনের সড়কে পরিণত হয়েছে। একে তো লেন মাত্র দুটি, তার ওপর প্রকল্পের মালামাল সরাসরি রাস্তার উপর লং ভেহিক্যাল (৩৫-৪০ ফুট) থেকে নামানো হয়। ওই মালামাল নামানোর সময় রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ থাকে। যার ফলে রাস্তায় ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বাড়তেই থাকে
টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়ে দায়িত্ব পালন করা গাজীপুর ট্রাফিক দক্ষিণ জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিলগেট মোড় থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়ের পর পর্যন্ত মোট ২২টি পাইলিংয়ের কাজ একসঙ্গে শুরু হয়েছে। এই রাস্তাটুকুর ডানে, বামে এবং মাঝে মোট তিনটি করে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। যার ফলে সর্বোচ্চ একটি বড় গাড়ি ছাড়তে পারি, মাঝেমাঝে ছোট ছোট গাড়ি ছাড়তে পারি। এটাই এখন টঙ্গী স্টেশন রোড মোড়ে যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা (বিআরটি কর্মকর্তারা) বলেছেন ইজতেমার আগে কাজটা শেষ করে দেবে। কিন্তু আমাদের মনে হয় শেষ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন : নিরাপত্তার বালাই নেই বিআরটি প্রকল্পে

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন চোর-পুলিশ পাহারার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। আমরা আর কী পাহারা দেব, তারাই এখন আমাদের বেশি পাহারা দেয়। আমরা একটা লোককে (পুলিশ সদস্য) এখানে ফিক্সড রাখতে পারি না। তারও প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হয় বা নাশতা খাওয়ার বিষয়ে থাকতে পারে। বিআরটি প্রকল্পের লোকজন এই সুযোগটাই নিয়ে থাকে। তারা মোবাইলে জানিয়ে দেয়— এখন পুলিশ নাই, মাল নামানো যাবে। তখনই তারা লং ভেহিক্যালগুলো এনে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে মালামাল নামানো শুরু করে দেয়। যার ফলে পেছনের পুরো অংশে যানজট লেগে যায়। খবর পেয়ে আমরা গিয়ে দেখি রাস্তার ওপর ট্রাক দাঁড় করিয়ে মাল নামাচ্ছে, ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি ওঠাচ্ছে।

আরও পড়ুন : ২১ জেলায় চলাচলে ভোগান্তির নতুন নাম বিআরটি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিলগেট এলাকায় বটলনেক (প্রশস্ত রাস্তা থেকে সরু হওয়া) আছে। সেখানে ৮০০ মিটার অংশে আমাদের কাজ হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। ওই কাজ দুই সপ্তাহ আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। একটু জটিলতা দেখা দেওয়ায় হয়নি। তবে এই সপ্তাহ নাগাদ শেষ হয়ে যাবে। এই কাজটুকু শেষ হয়ে গেলে এখানে যানবাহনের স্পিড আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ইজতেমার মাঠের দিকের রাস্তায় আমাদের ব্যাপক কাজ চলছে। ইজতেমা শুরু হওয়ার আগে ওই জায়গাটা আমরা একটা কাঠামোতে নিয়ে আসব। এরপর আর কোনো অসুবিধা হবে না। এই কাজটা আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করে ফেলব। ইজতেমার আগেই রাস্তাটিকে যান চলাচলের উপযোগী করতে আমরা চেষ্টা করছি।
গত ৬ নভেম্বর টঙ্গী ফ্লাইওভারের ঢাকামুখী দুটি লেন উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেদিন তিনি বলেছিলেন, আগামী মে-জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
/এমএইচএন/এসএসএইচ/
