জরিপের সমাপ্তি আজ, বের হবে আসল দরিদ্রের সংখ্যা

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:০০ পিএম


জরিপের সমাপ্তি আজ, বের হবে আসল দরিদ্রের সংখ্যা

চলতি বছরে ‘হাউজহোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেনডিচার সার্ভে (এইচআইইএস)-২০২২’ বা ‘খানা আয়-ব্যয় জরিপের’ বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর)। এ জরিপের মাধ্যমে দেশের বর্তমান দরিদ্র ও অতি দরিদ্রের সংখ্যা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধীনে প্রতি পাঁচ বছর পর পর এ জরিপ চালানো হয়। তবে এবারের জরিপের গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে আনা হয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন। 

প্রকল্পসূত্রে জানা যায়, এ জরিপের মাধ্যমে আগামী বছরের মার্চ মাসে দেশের দরিদ্র ও অতিদরিদ্রের আসল চিত্র পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন>>দরিদ্র দেশগুলোর ওপর ঋণের বোঝা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ : বিশ্বব্যাংক

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বীরহাটাব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তথ্য সংগ্রহকারীরা তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসময় কথা হয় সংগ্রহকারী সাইফুল ইসলাম, ডালিয়া, এনামুল হক ও ফাতেমার সঙ্গে।

ঢাকা পোস্টকে তারা জানান, তথ্য সংগ্রহের জন্য পূর্ব নির্ধারিত একেকটি বাড়িতে তারা বছরে ২০ দিন করে এসেছেন। ১২৫ পৃষ্টার একটি প্রশ্নপত্রে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন। খানার বা পরিবারের তথ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বেতন ও মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের অবস্থা সম্পর্কে জেনেছেন। একইসঙ্গে অকৃষি প্রতিষ্ঠান, গৃহ সংক্রান্ত তথ্য, কৃষি, অন্যান্য সম্পদ ও আয়, ভোগকৃত খাদ্য দ্রব্য, খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্য, সেবা ও খাদ্য নিরাপ্তা সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে তথ্য নিয়েছেন তারা।

এসময় কথা হয় তথ্যদাতা মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা একদিন পর পর আমার বাড়িতে এসেছেন। আমি যেসব তথ্য দিতে পারিনি তারা সেজন্য আমার ছেলে ও মেয়ের (যারা ঢাকায় থাকেন) মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের কল্যাণে আমি তাদের সবসময় সহযোগিতা করেছি।

আরও পড়ুন>>নেই কোনো ভারী শিল্প কারখানা, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম

প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, জরিপের গুণগত মান বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গত ২০১৬ সালে পরিচালিত জরিপে ক্যাফে বা কম্পিউটার এ্যাসিস্টেড ফিল্ড ইন্টারি পদ্ধতি ব্যবহার। এবার সেটি পরিবর্তন করে ক্যাপি বা কম্পিউটার এ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউয়িং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে সরাসরি তথ্য সংগ্রহকারীদের তথ্য ল্যাপটপের মাধ্যমে এন্ট্রি করা হয়েছে। মানুষ যেসব খাদ্য খায় তার ওজন সঠিকভাবে নিতে প্রথমবারের মতো তথ্য সংগ্রহকারীদের ওয়েট স্কেল বা ওজন মাপার মেশিন দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, পরিবারের খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা সঠিকভাবে লিখে রাখতে প্রতিটি পরিবারকে একটি করে ডায়েরি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নপ্রত্রে আনা হয়েছে নতুনত্ব। ভোগ করা খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্য এবং সেবার তালিকা তৈরিতে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৬ সালের জরিপের হিসাবে নেওয়া খাদ্য দ্রব্যের সংখ্যা ১৪৯ থেকে বাড়িয়ে ২৬৫টি করা হয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত দ্রব্য ও সেবার সংখ্যা ২১৬ থেকে বাড়িয়ে ৪৪১টি করা হয়েছে। এসডিজির প্রয়োজনে স্বাস্থ্য, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ এর টিকার তথ্য এবং পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা সংবলিত নতুন সেকশন যোগ করা হয়েছে প্রশ্নপত্রে। তথ্য সংগ্রহকারীদের ২১ দিনব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করেই মাঠে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন>>দরিদ্র দেশে পৌঁছাবে মলনুপিরাভির, চুক্তি জাতিসংঘের

তিনি আরও জানান, ‘হাউজহোল্ড ইনকাম এন্ড এক্সপেনডিচার সার্ভের (এইচআইইএস)-২০২২’ মাঠ জরিপের তথ্য সংগ্রহ শেষ হচ্ছে আজ। এবারের জরিপের প্রাথমিক তথ্য তিন মাসের মধ্যেই আগামী মার্চের মধ্যে জানা যাবে। এইচআইইএসের মাধ্যমে দরিদ্র, অতি দরিদ্র ও মাথাপিছু আয়-ব্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্রও উঠে আসবে। চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ৩০ ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে এ জরিপ।

এর আগে সর্বশেষে ২০১৬ সালে এই খানা আয়-ব্যয় জরিপ করা হয়। সেই জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ দশমিক ৩ এবং অতিদারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৯ শতাংশ।

এসআর/এমজে

Link copied