‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বেডের অভাব

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীই বেড পাচ্ছেন না। দিনের পর দিন তাদের ভাড়া থাকতে হচ্ছে আশপাশে। এতে বাড়ছে চিকিৎসা খরচ। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
তিনশ’ রোগীর এ হাসপাতালে ফেব্রুয়ারিতে সেবা নিয়েছেন ৪৪ হাজার ৪১১ জন। সক্ষমতার তুলনায় রোগীর চাপ অনেক বেশি থাকার কারণেই সবাই বেড পাচ্ছেন না বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন।
তবে বেড সংকটকে পুঁজি করে এখানে অনৈতিক বাণিজ্য চলে বলে অভিযোগ অনেকের। তাদেরই একজন হাবিবুর রহমান। বুধবার (১০ মার্চ) সকাল ৯টায় ক্যান্সার হাসপাতালের প্রধান ফটকে তাকে দেখা গেল খালি ট্রলি নিয়ে বের হচ্ছেন। ঢাকা পোস্টের ক্যামেরা তাকে অনুসরণ করে। হাসপাতালের পেছনের গলিতে ছ-৩/২ বাড়ির সামনে ট্রলি নিয়ে থামেন তিনি।
ঢাকা পোস্টকে জানালেন, তিনি পেশায় একজন শ্রমিক। তার স্ত্রী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ৮ দিন আগে স্ত্রীকে নিয়ে জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে আসেন।
তিনি জানান, হাসপাতালে সিট না পেয়ে ৮ দিন ধরে ভাড়া থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন ভাড়া ৫০০ টাকা। এছাড়া প্রতিদিন সকালে হাসপাতাল থেকে ১৫০ টাকায় ট্রলি ভাড়া নেন। ট্রলিতে করে থেরাপি দিতে নেন স্ত্রীকে। থেরাপি দিতে অনেক সময় টেকনিশিয়ানরা বাড়তি টাকা দাবি করেন বলেও অভিযোগ হাবিবুর রহমানের।
তার স্ত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত নাবিয়া বেগম জানান, ভাড়ার টাকা এখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। খরচ হচ্ছে অনেক। চিকিৎসার খরচ মেটাতে পরিবার নিঃস্ব হওয়ার পথে।
হাবিবুর রহমান জানান, আজই হাসপাতালে একটি সিট পাওয়ার কথা তার স্ত্রীর। কিন্তু তার প্রায় ৩ ঘণ্টা পর স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। অভিযোগ করলেন, তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ সিটটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য রোগীকে। হাসপাতালে একটি সিটের জন্য শুধু আকুতি জানানো ছাড়া যেন আর কিছুই করার নেই অসহায় নাবিয়াদের।
এ বিষয়ে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী মুশতাক হোসেন বলেন, ‘হাসপাতালের সক্ষমতার চেয়ে রোগী কয়েকগুণ বেশি। লোকবল কম। এখানে প্রয়োজনীয় টেস্টের রিপোর্ট দেওয়ারও পর্যাপ্ত লোকবল নেই। আমরা মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছি যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো হয়। পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগে যেন ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়।’
এইচকে/এমএমজে