এবার ছাড় পাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা?

সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ অনুযায়ী, কোনো সরকারি চাকরিজীবী অবসরে যাওয়ার পর গুরুতর অপরাধে সাজা পেলে তার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিক বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এ আইন কার্যকর থাকলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের ‘হয়রানির সুযোগ থেকে যায়’ বলে দাবি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। তাই এ আইনটি বাতিলের প্রস্তাব করেছে মন্ত্রণালয়টির একটি কমিটি। যদিও এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন বিশেষজ্ঞরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, 'সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ‘অবসর সুবিধা স্থগিত, প্রত্যাহার ইত্যাদি’ শীর্ষক ৫১ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, অবসর সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোনো গুরুতর অসদাচরণে দোষী সাব্যস্ত হলে, কারণ দর্শানোর যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান করে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারবে। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি থেকে উপধারাটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
এর আগে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসনের কাজে গতি আনার উদ্দেশ্যে 'সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনে গ্রেফতার প্রশ্নেও ছাড় পান সরকারি চাকরিজীবীরা। ফৌজদারি মামলায় আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণের আগে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সরকারি চাকরিজীবীদের গ্রেফতার করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান রাখা হয় এ আইনে। ওই সময় আইনটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়। তবে এসব আপত্তি আমলে নেয়নি সরকার। এবার অবসরে যাওয়ার পর গুরুতর কোনো অপরাধে সাজা পেলেও অবসর সুবিধা স্থগিত বা প্রত্যাহার প্রশ্নেও ছাড় পেতে যাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবসরে যাওয়ার পরেও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন সরকারি চাকরিজীবীরা। সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলে দায়ও নিতে হবে। এজন্য এ প্রস্তাব বাতিলের বিপক্ষে তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ অবসরে যাওয়ার পর অন্যায় করলে আইন-আদালত আছে। প্রচলিত নিয়মেই তার বিচার হবে। উপধারাটির মাধ্যমে অবসরে যাওয়ার পর হয়রানির সুযোগ থেকে যায়। তাই বাতিলের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবসরের পরেও সুযোগ-সুবিধা যখন পাচ্ছেন তখন তার দায়ও থাকতে হবে। এটা তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। এক পিঠ চাইলে আরেক পিঠও তো নিতে হবে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কেউ যদি অন্যায় করে তাহলে এ থেকে তাকে দায়মুক্তি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি দায়মুক্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ প্রস্তাব করা হয়, তাহলে আমি মনে করি, এটি সঠিক হবে না।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে গেলে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কিন্তু এটার মানে এই নয় যে, তিনি অপরাধ করে শাস্তি পাবেন না।
তিনি বলেন, এমন একটি সময় এ উপধারা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যখন সমাজে অনিয়ম ও দুর্নীতি বাড়ছে। এরমধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদেরও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। তাই এটা অব্যাহত থাকা বাঞ্ছনীয় বলে আমি মনে করছি।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিধি অনুবিভাগ) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ উপধারার মাধ্যমে অবসরে গেলেও সরকারি চাকরিজীবীদের হয়রানির সুযোগ থেকে যায়। কারো বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ থাকে তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে মামলা করতে পারবে। কিন্তু উপধারায় যেভাবে বলা আছে, মনে হয় চাইলেই তাকে (সরকারি চাকরিজীবী) হয়রানি করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবটি পেয়েছি, তবে চূড়ান্ত হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি এ প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে সভা করব, এগুলো আবার দেখব। প্রস্তাব এলেই যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে, তা কিন্তু নয়। কমিটি যদি মনে করে ঠিক তখন এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
এসএইচআর/এসকেডি/এমএমজে
