আল্লাহ বাঁচাইছে তাই বাঁচছি, এখান থেকে কেউ ফিরে আসে না

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) জরুরি একটি কাজে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। পরে কাজ শেষ করে বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড এলাকা থেকে মতলব এক্সপ্রেস বাসে ওঠেন মিজানুর। কিছুদূর যাওয়ার পর গাড়িটিতে গ্যাস নেওয়া হয়। সময় তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টা, গাড়িটি মহাসড়কের গৌরীপুর এলাকায়। টার্নিং নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ গিয়ার বক্সে বিকট শব্দ হয়, ধরে যায় আগুন। মুহূর্তেই সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাসে।
শনিবার (১৩ মার্চ) সকালে শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ ড্রেসিং করতে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এলে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় মিজানুরের। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চোখের সামনে এমন ঘটনার কথা মনে পড়লে আমার শরীর শিউরে ওঠে।
ভয়াবহ আগুনের বর্ণনা দেওয়ার সময় চোখ ছল ছল করছিল তার। বলছিলেন, ‘আমি যদি মারা যেতাম আমার ছেলেমেয়ের কী হতো। আল্লাহ আমারে বাঁচাইছে, তাই মনে হয় আমি বাঁচছি। না হলে এমন আগুন থেকে কেউ বাঁচতে পারে না। কী এমন হলো, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিকট শব্দে আগুন লেগে গেল। চোখের সামনে দুইজনকে ছটফট করতে করতে মারা যেতে দেখলাম। বাসে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল। সবাই যার যার জীবন বাঁচাতে মরিয়া। আমার শরীরের ১৯ শতাংশ পুড়ে গেছে।’
সেদিনের ঘটনা মনে করেই যেন ভয়ে কেঁপে উঠলেন মিজানুর। তিনি বলছিলেন, ‘গিয়ার বক্সে একটা শব্দ হলো, আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম। হঠাৎ দেখি আগুন ধরে গেল। আমার কিছু জিনিস ছিল, জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে লাফ দেই। ৩০ হাত দূরে গিয়ে আমার গায়ে আগুন লাগে, সঙ্গে সঙ্গে গেঞ্জি খুলে ফেলি। আমার বাম হাত পেট মুখ পুড়ে যায়। মাথার বড় চুল ও দাড়ি পুড়ে যায়।’
মিজানুর বলেন, আমি গাড়ি থেকে একজনকে টেনে হিঁচড়ে নামাই। ফায়ার সার্ভিস এলো অনেক পরে। বাসের সবাই কমবেশি অগ্নিদগ্ধ হয়। আমাদের সবাইকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। পোড়ার যে কী যন্ত্রণা, সেটা বলে বোঝানো যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে মতলবগামী মতলব এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাসস্টেশন এলাকায় পৌঁছালে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারে হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ২৫ জন।
শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ডা. সুলতান মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাসে বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাদের এখানে ১৮ জন চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন, আরেকজন এইচডিইউতে ভর্তি আছেন। বাকিদের রিলিজ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গোলাম হোসেন নামে একজনের ৩১ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। একজন নারী আছেন, তিনি এইচডিইউতে ভর্তি আছেন।
ঢামেক/এসএসএইচ/এমএমজে
