দাড়ি থাকলে চাকরি নয় : আড়ং-ব্র্যাকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ
‘মুখে দাড়ি থাকায় আমার চাকরি হয়নি, চাকরি করতে হলে ক্লিন শেভ করতে বলেছে’- হস্ত ও কারুশিল্প ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের (ব্র্যাক) বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন ইমরান হোসাইন লিমন নামের এক যুবক।
লিমনের দাবি ঢাকায় আড়ংয়ের একটি শাখায় সেলসম্যানের চাকরিতে যোগদানের জন্য ইন্টারভিউ দিতে যান তিনি। সেখানে চাকরির পূর্বশর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ‘মুখের দাড়ি শেভ করা’। তিনি বলছেন, দাড়ি থাকার কারণে নাকি তার চাকরি হয়নি। ঘটনাটি তুলে ধরে শুক্রবার (১২ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। রোববার (১৪ মার্চ) রাত থেকেই ভিডিওটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
লিমন বলেন, সম্প্রতি আমি আমি আড়ং, সেইলর, জেন্টেল পার্কসহ বেশ কয়েকটি শোরুমে সেলসম্যান পদের জন্য সিভি ড্রপ করি। শুক্রবার আমাকে আড়ংয়ের ইন্টারভিউর জন্য তেজগাঁওয়ে ডাকা হয়। ইন্টারভিউর সময় আমি মাস্ক পরা ছিলাম। সেখানে যারা ছিলেন, আমি তাদের সব প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিয়েছি। ইন্টারভিউর শেষ পর্যায়ে তাদের কথা ও ভঙ্গি দেখে মনে হয়েছে তারা আমাকে নিয়ে নেবেন। তারা আমার কথায় সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, কথা শেষ করে চলে যাওয়ার সময় তারা আমাকে দাঁড়াতে বলেন। তারা হয়তো আমার মাস্কের পাশ দিয়ে গালে দাড়ি দেখতে পান। আমাকে তারা বললেন, ‘মাস্কটা খোলো।’ আমি মাস্ক খুলতেই তারা বললেন, ‘উই আর ট্রুলি স্যরি (আমরা সত্যিই দুঃখিত)।’ আমি বললাম, ‘কেন, কী হয়েছে?’ উনারা বললেন, ‘আপনাকে আমরা কনফার্ম করতে পারছি না। আপনি যদি দাড়িটা ক্লিন শেভ করতে পারেন তাহলে আপনার জবটা আমরা এখানে কনফার্ম করলাম ইনশাআল্লাহ।’
লিমন বলেন, আড়ংয়ের লোকজন আমাকে বলেন, ‘আমাদের আড়ংয়ের রুলস হচ্ছে সেলসম্যানের জব করতে হলে আপনাকে ক্লিন শেভ করতে হবে।’ তাদের এ কথা শুনে আমি হতভম্ব। আমি ফিরে আসার সময় আমি তাদেরকে বলি, তাহলে আমি এই জবটা করবো না। আমি একথা বলে চলে আসছিলাম। তবে আমি আবারও তাদের কাছে ফিরে যাই। তাদেরকে বলি যে, আমি খুবই নিডি (অভাবগ্রস্ত)। আমাকে কি কোনোভাবে চাকরিটা দেয়া যায়? তারা বলে, ‘না এটা আড়ংয়ের রুলসে নাই।’
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ‘বয়কট আড়ং’ লিখে পোস্ট দিচ্ছেন। সোমবার (১৫ মার্চ) সকালে সিলেটের জেল রোডে আড়ংয়ের শো-রুমের সামনে ‘সিলেটের সচেতন আলেম সমাজ’র একটি ব্যানারে প্রতিবাদ করেন স্থানীয়রা। সেখানে বক্তারা বলেছেন, আমাদের প্রিয় নবী (স.) এর সুন্নাত দাড়ি নিয়ে তামাশা করেছে আড়ং। তাই অবিলম্বে আড়ং কর্তৃপক্ষকে দ্রুত এমন অবস্থান এবং মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে। নতুবা দেশবাসীকে নিয়ে আড়ংয়ের সব পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়া হবে।
এদিকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে আড়ং কর্তৃপক্ষ দাড়ির বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ক্ষমা না চাইলে বাদ জুম্মাহ তাদের ধানমন্ডির শোরুমে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
এ বিষয়ে ব্র্যাক-আড়ং এর চিফ অপারেটিং অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সম্প্রতি আড়ং এর একটি ইন্টারভিউ বোর্ডে উপস্থিত একজন চাকরিপ্রার্থীর নেতিবাচক অভিজ্ঞতার ব্যাপারটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটি নিঃসন্দেহে আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থি।
তিনি বলেন, আড়ং বয়স, বর্ণ, ধর্ম, লিঙ্গ, অক্ষমতা বা জাতিগত উৎস নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক মর্যাদা এবং অন্তর্ভুক্তির অধিকারগুলো সমুন্নত রাখে। আমাদের নিয়োগের সিদ্ধান্তে ধর্মীয় বিশ্বাস ও পালনকে কখনই বিবেচনা করা হয় না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি কর্মী রয়েছেন। সব ধর্মের কর্মীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে এবং প্রকাশ্যে তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতের ইন্টারভিউ বোর্ডগুলোর পরিচালনায় আমাদের মূল মূল্যবোধগুলোর প্রতিফলন নিশ্চিত করতে আমরা নিবিড়ভাবে কাজ করব এবং বোর্ড সংশ্লিষ্টদের শিষ্টাচারের বিষয়ে সংবেদনশীলতা আনতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, সেই সব চাকরিপ্রার্থী যারা মনে করেন আমাদের কোনো একটি ইন্টারভিউ বোর্ডে যে কোনো বিষয়ে তারা যথাযথভাবে পরীক্ষিত হননি তারা আমাদের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে ([email protected]) যোগাযোগ করতে পারেন।
নিকাব পরা ক্রেতাকে ঢুকতে না দিয়ে সমালোচিত আড়ং
সম্প্রতি নিকাব পরা নারী ‘নিকাব খুলে মাস্ক’ পড়েননি বলে তাকে আউটলেটে ঢুকতে দেয়নি আড়ং। এ ঘটনাটিও সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল।
এবিষয়ে আড়ং জানায়, নিকাব পরিধানকারী সম্মানিত ক্রেতাকে মাস্ক পরিধানের আহ্বান ছিল আমাদের অভ্যন্তরীণ ভুল বোঝাবুঝি এবং একইসঙ্গে দুঃখজনক। আমরা আমাদের ভুল বুঝা মাত্রই ঘটনার দিনই দুঃখ প্রকাশ করি এবং তাকে নিকাব পরা অবস্থায় মাস্কবিহীন আমাদের আউটলেটে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাই। তিনি পরদিন আমাদের আউটলেটে এসে শপিং করেন। এছাড়াও এ ঘটনার পর থেকে নিকাব পড়ে যে কেউ মাস্ক পড়া ছাড়া আমাদের আউটলেটে শপিং করছেন।
এআর/আরএইচ