ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের চরিত্র সাংঘর্ষিক : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম নিরেপক্ষতা নিয়ে আমাদের চরিত্র নিজেদের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। যখন গুজরাটে দাঙ্গা হয়, মুসলমানরা নির্যাতিত হয়, তখন এদেশের সাম্প্রদায়িক মুসলমানরাও ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলেন। আবার বাংলাদেশে কোনও ঘটনা ঘটলে তখন আর আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ থাকি না। তখন আমরা সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের লেখা ‘বঙ্গবন্ধু-রবীন্দ্রনাথ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ ও তার সহধর্মিনী নাফিসা বানুর লেখা ‘বঙ্গবন্ধু শুদ্ধাচার নারীর ক্ষমতায়ন ও অন্যান্য’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা সাম্প্রদায়িক-অসাম্প্রদায়িক, এই প্রশ্ন বার বার তুলি। প্রকৃতপক্ষে আমাদের নিজেদের চরিত্রটাই সাংঘর্ষিক। যখন গুজরাটে দাঙ্গা হলো, তখন এই দেশের মুসলমানরা বলতে লাগলো, গুজরাটে যদি এখন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার থাকতো, তাহলে অবস্থা এই রকম হতো না। আর আমাদের দেশে যখন কোন ঘটনা ঘটে তখন সেই অসাম্প্রদায়িক মানুষগুলোই সাম্প্রদায়িক হয়ে যান। তারাই রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে মাতামাতি করেন।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এখনো আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানতে চান না। তারা সেই সব লোক, যারা পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার পরেও বাংলাদেশকে স্বীকার করেনি। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করছেন।’
বইয়ের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যে বই লিখেছেন, তার প্রতিটা লেখার ভেতর তার অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা, মানুষ সম্পর্কে তার অনুভূতি ফুটে উঠেছে। নাফিসা বানুর বইয়েও তার চিন্তা চেতনা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক অনন্য সম্মিলন ঘটিয়েছেন।’
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। তিনি এবং তার পরিবারের সবাই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করেন বলেই এই বই লিখতে পেরেছেন।’
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ’আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ বিচারপতি দম্পতির লেখা বইয়ের একসঙ্গে মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে। এটা বিরল। তিনি অন্যান্য বিচারপতিদেরও বই লেখার অনুপ্রেরণা দেন।’
আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা বেগম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, জার্নিম্যান প্রকাশনীর প্রকাশক কবি তারিক সুজাত এবং মাওলা ব্রাদার্সের প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক বক্তব্য রাখেন।
আপিল বিভাগের সব বিচারপতি বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতি ও আইনজীবী, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এমএইচডি/এসএম