আমিরাত প্রবাসীদের এনআইডি করতে লাগবে ৫০ দিরহাম

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার অন্যতম যোদ্ধা প্রবাসীরা। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। কোভিডকালীন সংকটের সময়ও দেশের রিজার্ভে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন প্রবাসীরা। এবার সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরই প্রবাসে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) করতে ৫০ দিরহাম ফি নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ৪৫৬ টাকা (প্রতি দিরহাম ২৯.১২ টাকা ধরে)। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে বসবাস করে এনআইডি করার সুযোগ পাচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। এনআইডি করার এ সুযোগ পাবেন একমাত্র বৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিরাই।
সম্প্রতি ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের ভোটার নিবন্ধনপূর্বক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান’ বিষয়ে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির’ সভায় এমন প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। আবুধাবিস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস ইসিকে এমন প্রস্তাব দিয়েছে। সভায় কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে (অব.) মো. আহসান হাবিব খান সভাপতিত্ব করেন। আবুধাবিস্থ দূতাবাসের এ প্রস্তাবটি কমিশন বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আহসান হাবিব খান।
ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, সরকারের কৃচ্ছতা সাধন নীতির কারণে নির্বাচন কমিশন আরব আমিরাতে নিজস্ব কোনো টিম পাঠাবে না। আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমেই অপারেটর নিয়োগ করে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এরপর দেশের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদন যাচাই শেষে দেওয়া হবে এনআইডি। প্রথমবার কোনো ফি নাগরিকদের না দিতে হলেও দূতাবাসকে এনআইডি প্রতি ৫০ দিরহাম সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। আবেদনকারীর নাম হতে হবে জন্মনিবন্ধন অথবা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী। পুরো কার্যক্রমটি সম্পন্ন করার জন্য পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর কর্তৃক দূতাবাস/মিশন হতে পাসপোর্ট ইস্যু/রিইস্যুর ক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতি অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই সভায়। এদিকে রোহিঙ্গা বা বিদেশিদের এ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ঠেকাতে জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিরাপত্তা বিধানকল্পে বিশেষ এলাকা ও বিশেষ কমিটি সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রবাসে বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
সভার কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর ‘প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ প্রণয়ন করেন। ওই নীতিমালায় পুরো কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব টিম কর্তৃক পরিচালনা করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত রয়েছে। যেহেতু সরকারের বর্তমান কৃচ্ছতা সাধন নীতির আলোকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব টিম প্রেরণের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সেজন্য দূতাবাস কর্তৃক নিয়োগকৃত অপারেটরদের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রির কাজটি হতে পারে। তবে কারিগরিভাবে ওই অপারেটরদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে নিবন্ধনের জন্য ব্যবহৃতব্য ল্যাপটপসমূহে তাদের বায়োমেট্রিক লগইন, নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) প্রেরণসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও মনিটরিংয়ের জন্য নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ের জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের সংযুক্ত আরব আমিরাত/সংশ্লিষ্ট দেশে সফরের ব্যবস্থা রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ সেন্ট্রাল ডাটাবেইজের সাথে নেটওয়ার্কিং প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য আইডিইএ প্রকল্প-২ এর সহায়তা নিয়ে এনআইডি উইংয়ের কারিগরি অধিশাখা উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার হিসাবে নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান সংক্রান্ত কার্যক্রমের সময়কাল ও অভিজ্ঞতা নিয়ে পরবর্তীতে রেমিট্যান্স প্রবাহের আধিক্য বিবেচনায় বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত দেশসমূহে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাপক আকারে শুরু করার সুপারিশও করেছে ‘জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটি’।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে এ উদ্যোগটি হাতে নেয়। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। পরবর্তীতে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপের প্রবাসীদের জন্যও সুযোগটির সূচনা করা হয়।
সেসময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারি কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা। তবে মহামারি কেটে গেলেও সে উদ্যোগ এগোয়নি।
অনলাইনে কার্যক্রম শুরু হওয়া ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হয়ে এনআইডি পেতে আবেদন করেছেন পাঁচ হাজার ১৩৮ জন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ৬১০ জনের আবেদন এখন পর্যন্ত তদন্তই করেনি ইসি। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ আবেদনে তদন্ত ছাড়া পড়ে আছে। এদের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে ৪৭৫ জনের, এর মধ্যেও আবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ২০৩ জন প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তাধীন রয়েছে ৫৩ জনের আবেদন। অর্থাৎ তিন বছরে তদন্ত সম্পন্ন করে ২৭২ জনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে, যারা পাচ্ছেন এনআইডি। গত তিন বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আবেদন এসেছে ১ হাজার ৩৭৫টি, এর মধ্যে তদন্ত হয়নি এক হাজার ২৫৪টির, আর অনুমোদন হয়েছে ৬৩ জনের আবেদন।
এসআর/এফকে