শিবচরে বাস দুর্ঘটনা : ঢামেকে মারা যাওয়া দুইজনের পরিচয় মিলেছে
মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা ১০ জনের মধ্যে দুইজন মারা গেছেন। নিহত দুজনের পরিচয় শনাক্ত করেছে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। এ দুর্ঘটনায় আহত বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢামেকের চিকিৎসকরা।
রোববার (১৯ মার্চ) সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন যাত্রী নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ জনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন, শেখ আকব্বর আলী (৬৫) ও মিনহাজ বিশ্বাস (৩২)।
আহতরা হলেন, ইমামুল হোসাইন সাগর (৩৫), আব্দুল হামিম (৫৫), অমিত (২৮), শেখ ফয়সাল আহমেদ (৪০), মো বদরুদ্দোজা (৩০),পঙ্কজ দাস (৫০), ঝুমা আক্তার (৩৪), ও বুলবুল (৫০)।
নিহত আকবর আলীর ভাতিজা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ি বাগেরহাট থানার রামপাল এলাকায়। আমার চাচা চোখের ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকায় আসছিলেন। পথিমধ্যে ইমাদ পরিবহনের বাসটি শিবচর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে আমার চাচা গুরুতর আহত হন। আমার চাচাকে ঢাকা মেডিকেলে আনার পরে মারা যান।
নিহত মিনহাজ বিশ্বাসের চাচাতো ভাই সাব্বির বলেন, আমার চাচাতো ভাই ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনাকবলিত বাসের সুপারভাইজার ছিলেন। পরে আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে আমরা ঢাকা মেডিকেলে এসে তার মরদেহ শনাক্ত করি। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানার পুরান মানিকদা এলাকায়।
আহত ইমামুল হোসাইন সাগরের খালা রেহানা বলেন, আমার ভাগ্নে খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকা থেকে ঢাকায় আসছিলেন। তিনি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। আহত অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত আব্দুল হামিমের ভাই সাইদুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ি খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা এলাকায়। হামিম ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরি করে। সকালে ঢাকায় আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত শেখ ফয়সাল আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি এনসিসি ব্যাংকের খুলনা শাখার ম্যানেজার ছিলেন।
আহত বদরুদ্দোজার সহকর্মী এজাজ জানান, বদরুদ্দোজা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের আইটি ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তিনি প্রতিদিন মাদারীপুর থেকে এসে ঢাকায় অফিস করতেন। আজ মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসার সময় এই দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। তিনি ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত ঝুমা আক্তারের ফুফাতো ভাই জুলফিকার বলেন, আমার বোনের স্বামী সৌদি প্রবাসী। তিনি আজ সৌদি যাওয়ার জন্য তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র নিতে দেবর সজীবের সঙ্গে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসছিলেন। পথিমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় তার দেবর সজীব ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আমার বোন গুরুতর আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
আহত অমিতের চাচা রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজা আইপিডিসি ফাইন্যান্সের এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করত। মাঝেমধ্যে শুক্র-শনিবার ছুটিতে তিনি গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরে আসতেন। আজ ঢাকায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত বুলবুলের স্ত্রী মাহফুজা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাকায় এনার্জিপ্যাক কোম্পানিতে চাকরি করতেন। আজ গোপালগঞ্জের হরিদাসপুর এলাকা থেকে ঢাকায় আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন।
আহত পংকজ দাসের ভাতিজা লিটন দাস বলেন, আমার চাচা আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ম্যানেজার ছিলেন। আজ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার কান্দিগ্রাম এলাকা থেকে ঢাকায় আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঢাকা মেডিকেলে ৯ জন এসেছিলেন। এদের মধ্যে দুইজনকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আহত আটজনের মধ্যে একজনকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন। বাকি আটজনের ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের আটজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
এসএএ/এসকেডি