সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টিতে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ

শিশুসহ সকল এলাকাবাসীর খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টিতে এলাকার অভ্যন্তরে কম ব্যস্ত সড়কে নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখে বা নিয়ন্ত্রণ করে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ বলে মত দিয়েছেন আলোচকরা।

তারা বলেন, গত ২০ বছরে ঢাকা শহর থেকে ১২৬টি মাঠ হারিয়ে গেছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাঠ-পার্ক তৈরির প্রস্তাবনা রয়েছে, তবে তা বাস্তবায়ন যথেষ্ট সময় সাপেক্ষ বিষয়।

মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সার্বিক সহযোগিতায় খিলগাঁও পল্লীমা সংসদের পূর্ব পাশে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এই কার্যক্রমের উদ্যোগে সহযোগীতা করে হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, পল্লীমা সংসদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), খিলগাঁও সামাজিক সংস্থা, মার্শাল আর্ট ফাউন্ডেশন, কারফ্রি সিটিস এলায়েন্স বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট।

আয়োজকরা জানান, প্রতি মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এ সড়কে গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে দাবা-লুডু-ক্যারাম-দড়ি লাফ-ব্যাডমিন্টন, ছবি আঁকা, কারুকাজ শিখানোসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। 

গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িকে জায়গা দিতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ গণপরিসর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি নিজেরাই। আমরা জানি, শিশুদের খেলাধূলার জন্য এ শহরে পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই। এলাকার অভ্যন্তরে কম ব্যস্ত রাস্তায় কিছু সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে নিঃসন্দেহে এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাহবুবুল আলম বলেন, শিশুরা খেলাধূলার সুযোগ পেলে তাদের মস্তিষ্ক সক্রিয় হওয়ার মাধ্যমে সুষ্ঠু মেধাবিকাশ ঘটে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে এককেন্দ্রীক ও নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে না। গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজনের মাধ্যমে বাড়ির কাছে খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা এলাকাবাসীর খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

খিলগাঁও গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমের সমন্বয়কারী হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, খিলগাঁও এলাকার একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা গাড়িমুক্ত সড়ক কার্যক্রমটি শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি মানুষকে এ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ২০১৬ সাল থেকে প্রথম বাংলাদেশে সরকারিভাবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন হয়ে আসছে। বর্তমানে রায়েরবাজার ও মোহাম্মাদীয়া হাউজিং সোসাইটিতে গাড়িমুক্ত সড়ক আয়োজিত হচ্ছে। আমাদের শহরে শিশুদের খেলাধূলার যথেষ্ট সুযোগ নেই। এ ধরনের কার্যক্রম শিশুদের বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক এরশাদ মনসুর, খিলগাঁও আবাসিক এলাকা পরিবেশ রক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী আওয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ, বাবুল একাডেমী ও পল্লীমা বিদ্যাপীঠের প্রিন্সিপাল মীরা রায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ২ এর আঞ্চলিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মো. সালেহ প্রমুখ।

এএসএস/এনএফ