বছরে নির্মিত হচ্ছে এক লাখ ভবন, অধিকাংশের নেই স্ট্রাকচারাল ডিজাইন

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মিজানুর রহমান বলেছেন, প্রতি বছর ঢাকায় এক লাখের বেশি নতুন ভবন নির্মিত হয়। এরমধ্যে ১০ হাজার ভবন কোনও রকমে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন পাস করে। দেখতে ভালো হলেও এগুলো স্ট্রাকচারাল ডিজাইনের নয়। এসব সুপারভাইজ করার মতো লোকও নাই। থাকলেও আগ্রহ নেই।
তিনি বলেন, বেশি বললে সরকারেরই অন্য সংস্থার বদনাম হয়। আসলে এগুলো করার কথা রাজউকের। কিন্তু রাজউক সেটা করেও না, করছেও না, করতে পারেও না। আল্টিমেটলি আমরা সবাই ঝুঁকিতে, অতি ঝুঁকিতে আছি।
‘স্ট্রেংদেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ সুপার কনসোর্টিয়াম প্রকল্প আয়োজিত ‘দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার’ বিষয়ক শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
ঢাকার বনানীর একটি হোটেলে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউমেনিটেরিয়ান এইড-এর অর্থায়নে আয়োজিত এ কর্মশালায় দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বিষয়ে সচিত্রে উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ডিজি মিজানুর রহমান বলেন, ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশের আশপাশে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সেসময় মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমই ছিল। কারণ তখন টিনের বাড়িই বেশি ছিল। টিনের নিচে পড়লে হয়তো কারও কাটবে বা ফাটবে, কিন্তু মৃত্যুর ঝুঁকি কম। ১০০ বছর পর এই ধরনের ভূমিকম্প রিপিট হয়। সে হিসেবে সোয়া শ’ বছর হয়ে গেছে। নতুন একটি ভূমিকম্প এখন আমাদের প্রকৃতিগতভাবে পাওনা। সেটি হলে আমাদের কী হবে তা ভেবে পাই না।
তিনি বলেন, আসলে আমাদের ঝুঁকি নিরসনে কী করার উচিত দেরি না করে এখনই ভাবতে হবে, পরিকল্পনা নিতে হবে, যেসব ভবন ভূমিকম্প ঝুঁকিমুক্ত নয়, সেগুলো রেকটোফিটিং করতে হবে। এক বছরে যদি এরকম নতুন লাখ পরিমাণ ভবন নির্মিত হয় তবে কতোগুলোতে আপনি রেকটোফিটিং করাবেন? সব দোষ আমাকে দিয়েও বা লাভ কি?

রমজান আসন্ন, রোজা আমাদের জন্য দুর্যোগ মোকাবিলার বড় শিক্ষার উদাহরণ হতে পারে উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা এ বলেন, নুহ (আ.) কে আল্লাহ নৌকা বানাতে বলেছিলেন। বন্যা আসছে, তুমি নৌকা বানাও। যারা নুহ (আঃ) কে বিশ্বাস করেনি তারা পানিতে ডুবে মরেছে। নৌকা কিন্তু ডোবেনি। আগামীকাল থেকে আমাদের পবিত্র রমজান শুরু। রমজানে ১৬/১৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকাটা দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বড় সহায়ক। কারণ সাভারের রানা প্লাজার মতো একটি ভবনে ধ্বংসস্তূপ সরাতে আমাদের একমাসের বেশি সময় লেগেছে। সিদ্দিকবাজারের ভবন কীভোবে সরানো হবে, নাকি থাকবে, সরাতে হলে কীভাবে করা যাবে, ভেবেই পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, কোনো দুর্যোগ আসলে একা আসে না। একটা দুযোর্গ আসলে আরেকটা কুটুমের মতো হাজির হয়। তুরস্কে যেমন ভূমিকম্পের পর বন্যা হাজির। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই। সুতরাং দুর্যোগ বিষয়ে আমাদের জনগণকে জানাতে হবে, সতর্ক করতে হবে। শিল্প বিপ্লবের সব ধরনের প্রযুক্তি দিক আছে তা আমাদের জন্য কনভার্ট করে জাতির জন্য উপযোগী করতে হবে। মোবাইলে সিগনালিং সিস্টেম, বন্যা ও ভূমিকম্পের আর্লি মর্নিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
তিনি বলেন, দুর্যোগের ঝুঁকি নিরসনে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে ঝুঁকি নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘দুর্যোগ প্রতিরোধে আমাদের প্রয়োজন প্রশিক্ষিত দল, একই সঙ্গে বাসা বাড়িতে আগুনের এবং অন্যান্য ঝুঁকি বাড়ায় এমন সরঞ্জামের ব্যবহার কমাতে হবে’।
কর্মশালায় আগত অতিথিরা দুর্যোগ ঝুঁকি নিরসনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। বক্তারা বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। একই সঙ্গে জরুরি কার্যক্রম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাথমিক শনাক্তকরণের মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি নিরসন করতে হবে।
কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাপ্পা গঞ্চিকারা, ইউনাইটেড পারপাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও জরুরি সাড়াদান ইউনিটের প্রধান, মাসুদ রানা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান সাদিয়া হামিদ কাজী।
‘স্ট্রেংদেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স' সুপার কনসোর্টিয়াম প্রকল্প, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি কৃত্রিক বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সমাধান কল্যাণপুর বস্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করেছে। যা আগুন এবং জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত দুর্যোগ ঝুঁকির আগাম পূর্বাভাস দিতে সক্ষম। ফলে, দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি রোধ অনেকাংশে সম্ভব হবে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রটেকশন অ্যান্ড হিউমেনিটেরিয়ান এইডের অর্থায়নে, জনসাধারণ এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে দুর্যোগে সহনশীলতা গড়ে তোলার জন্য ‘স্ট্রেংদেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স’ (সুপার) কনসোর্টিয়াম প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে অ্যাকশনএইড, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন। এই প্রকল্পে কৌশলগত সহায়তাকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর দপ্তর (ইউএনআরসিও)।
জেইউ/এসএম