ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আয়নীকে হত্যা : পিবিআই

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৯ এএম


চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানা এলাকার আবিদা সুলতানা আয়নী (১০)। বিড়াল ছানার প্রতি ছিল যার প্রচণ্ড লোভ। কেউ বিড়াল ছানা দেবে বলে ডাকলেই ছুটে যেত চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশুটি। আর এ সুযোগই কাজে লাগান সবজি বিক্রেতা মো. রুবেল (৩৫)। কৌশলে আয়নীকে ডেকে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। তারপর ধর্ষণের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গলা টিপে হত্যা করা হয় আয়নীকে।

রুবেলকে আটক ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর এসব তথ্য দিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কর্মকর্তারা।

পিবিআইয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান,  ২১ মার্চ বিড়াল ছানা দেবে বলে আয়নীকে দেখা করতে বলেন রুবেল। এরপর তাকে একটি ভবনের চতুর্থ তলায় নিজের ফুফুর বাসায় নিয়ে যান। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর ঘটনা জানাজানি হওয়ার আশঙ্কায় আয়নীকে গলা টিপে হত্যা করেন রুবেল। 

dhakapost

পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগে ওই এলাকায় একটি বলাৎকারের ঘটনা জানাজানি হয়। এটিও এরকমভাবেই জানাজানি হয়ে যাবে এ আশঙ্কায় রুবেল শিশু আয়নীকে হত্যা করেন। বিকেলে হত্যার পর ওইদিন রাতে আয়নীর মরদেহ বস্তায় ভরে পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় ফেলে দেওয়া হয়।

রুবেলের দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুধবার ভোরে আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আরও পড়ুন >>> মামলা নেয়নি পুলিশ, নিখোঁজের ৮ দিন পর ডোবায় মিলল শিশুর মরদেহ

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আয়নীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

নিখোঁজের ৮ দিনের মাথায় বুধবার ভোরে আব্দুর কাজীর দিঘীরপাড়া এলাকা থেকে আবিদা সুলতানা আয়নীর (১০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ২১ মার্চ থেকে নিখোঁজ ছিল আয়নী। 

আয়নী নিখোঁজ হওয়ার পর তার মা বিবি ফাতেমা একাধিকবার পাহাড়তলী থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন।  রুবেল তার মেয়েকে নিয়ে গেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছিলেও। কিন্তু মামলা নেয়নি পাহাড়তলী থানা পুলিশ। নিরুপায় হয়ে ফাতেমা শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের করেন আদালতে। আদালত অভিযোগ শুনে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ এখনো থানায় এসে পৌঁছায়নি। এরইমধ্যে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই শিশু আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিবি ফাতেমা চট্টগ্রাম পিবিআই কার্যালয়েও যোগাযোগ করেন। পিবিআই কর্মকর্তারা অভিযোগ শোনার পর যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার অভিযুক্ত রুবেলকে হেফাজতে নেয়। এরপর তাকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু কোনোভাবে মুখ খুলছিলেন না রুবেল। পিবিআই কর্মকর্তাদের টানা জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে ভোর রাতে মুখ খোলেন তিনি। জানান শিশু আয়নীকে তিনিই হত্যা করেছেন। বস্তায় ভরে তার মরদেহ ফেলে দেন পার্শ্ববর্তী ডোবায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে অভিযানে গিয়ে পিবিআই কর্মকর্তারা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে।

আরও পড়ুন >>> কুরআন পড়তে বেশি আগ্রহ ছিল মেয়েটির : আয়নীর মা

আয়নীর মরদেহ উদ্ধারের পর তা মা ফাতেমা বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম রুবেল আমার শিশুকে নিয়ে গেছে। কিন্তু তারা উল্টো আমাকে বলে রুবেল নাকি ভালো ছেলে। রুবেল এ কাজ করতে পারে না। তোমার মেয়ে প্রেম করে! আমার ১০ বছরের মেয়ে কীভাবে প্রেম করে? আপনারা বলেন? এখন আমার বুক খালি হয়ে গেল। 

এমআর/এফকে/এনএফ

Link copied