পঞ্চাশ লাখে আপস : ধর্ষণের মামলায় সাবেক এমপি আরজুকে অব্যাহতি

Dhaka Post Desk

আদালত প্রতিবেদক

২৯ মার্চ ২০২৩, ০৪:৩৯ পিএম


পঞ্চাশ লাখে আপস : ধর্ষণের মামলায় সাবেক এমপি আরজুকে অব্যাহতি

পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুককে ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২৯ মার্চ) মামলাটির অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন মামলা থেকে আসামিকে অব্যাহতি দিলে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে আদালতকে জানান বাদী। শুনানি শেষে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৫-এর বিচারক বেগম সামছুন্নাহারের আদালত মামলা থেকে আরজুকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর আলী আজগর স্বপন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে তালাকপ্রাপ্ত এক নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার ঘটনায় করা ধর্ষণ মামলায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি একই আদালতে সাবেক এমপি আরজু আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর গত ১৩ মার্চ একই আদালত মেয়ের ভরণপোষণের জন্য পঞ্চাশ লাখ টাকা ও বিয়ের কাবিনের জন্য দুই লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে দশ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দেন।

গত বছরের ২২ এপ্রিল শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী আদালতে ধর্ষণ মামলাটি দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাদীর প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তখন তিনি একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন এবং একা জীবনযাপন করছিলেন। আত্মীয়-স্বজনেরা তাকে পুনরায় বিবাহ দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষের দিকে বাদীর চাচার মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে আসামি নিয়মিত বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে এবং একপর্যায়ে সফল হয়। আসামি তাকে জানান, তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা গেছেন। তার প্রথম পক্ষের ছেলে সন্তানকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে বাদীকে তার প্রতি দুর্বল করে ফেলেন। সামাজিক নির্ভরতার জন্য এবং একাকিত্বের অবসানসহ নতুন সংসার শুরু করার জন্য তিনি আসামিকে মনে প্রাণে ভালোবেসে ফেলেন এবং বিবাহের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বিবাহ করতে মতামত প্রদান করেন।

২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামির সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বিভিন্ন ছলচাতুরীর মাধ্যমে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাদীর দৃঢ়তার জন্য বাচ্চা নষ্ট করতে পারেননি। বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। বাদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন আসামি। ইতোমধ্যে বাদীর নামে ফ্ল্যাট কিনে দেওয়ার কথা বলে তার পিতার কাছ থেকে নেওয়া দশ লাখ টাকা এবং জমানো আট লাখ টাকা এবং তার ১৫ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে বিক্রি করে আসামিকে টাকা দিলেও তিনি কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেননি এবং কোনো প্রকার টাকাও ফেরত দেননি। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রী জীবিত। সে ঘরে কন্যা সন্তান আছে এবং স্ত্রীর সংসারে বসবাস করেন।

পরে ওই নারী আরো জানতে পারেন- বিবাদী ইতোপূর্বে বাদীর নিকট ফারুক হোসেন নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্যই বাদীকে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সাথে বিবাহ এবং গর্ভপাত ও ঔরসের কন্যার পিতা পরিচয়কেই সরাসরি অস্বীকার করেন।

মামলার তদন্তে দেখা যায়, বাদীর কন্যা সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে কন্যা সন্তানটি বাদীর গর্ভজাত সন্তান এবং আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা বলে মতামত এসেছে।

এনআর/এমজে

Link copied