বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ড

ব্যবসায়ীদের আহাজারি, কাজ হারানোর শঙ্কায় ৫০ হাজার কর্মচারী

Dhaka Post Desk

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৪৬ পিএম


ব্যবসায়ীদের আহাজারি, কাজ হারানোর শঙ্কায় ৫০ হাজার কর্মচারী

রাজধানীর বঙ্গবাজারে কয়েকটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এসব মার্কেটে কর্মরত অর্ধ লাখ কর্মচারী বেকার হয়ে পড়ার এবং বেতন না পাওয়ার আশঙ্কায় আছেন।

রিয়াজুল গার্মেন্টস, খান ফ্যাশন, এস এ গার্মেন্টস, খান শাড়ি বিতানসহ বঙ্গ-মার্কেটে ৫টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মো. মামুনের। ঈদকে সামনে রেখে ৫টি দোকানে ১০ কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু আগুনে এক নিমেষে সব শেষ হয়ে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এ ব্যবসায়ী কাঁদছিলেন আগুন থেকে বাচাঁতে পারা অল্পকিছু মালামালের ওপর বসে।

ঢাকা পোস্টকে তিনি জানান, ১০ কোটির টাকার পণ্যের মধ্যে ১ কোটি টাকার মতো বিক্রি করতে পেরেছেন গত কিছুদিন। বাকি পুরো মালামাল দোকান ও গুদামে ছিল। এরমধ্যে মাত্র কয়েক লাখ টাকার মালামাল রক্ষা করতে পেরেছেন। বাকি সব মাল পুড়ে গেছে। এখন কীভাবে তিনি ঋণ পরিশোধ করবেন, কীভাবে দোকানের কর্মচারীদের বেতন দেবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। 

ব্যবসায়ী মামুন বলেন, ‘আমার জীবনের সব উপার্জন যে আগুনে পুড়ে গেল, এই ক্ষতির দায় নেবে কে? কে আমার ঋণ পরিশোধ করবে? আমার তো কিছুই নেই। সব তো শেষ হয়ে গেছে।’

dhakapost

বঙ্গবাজার মার্কেটে ‘মায়ের দোয়া' নামে ৬টি দোকান ছিল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হেলাল খানের। তার দাবি, এসব দোকানে ৬ কোটি টাকারও বেশি মালামাল ছিল। কোনো রকমে একটি দোকানের মালামাল বের করতে পেরেছেন। গোডাউনের মালামাল বের করতে পারেননি। কিছু পুড়েছে, বাকি সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

হেলাল খান জানান, ‘ঈদ উপলক্ষ্যে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার মালমাল তুলেছি। সব নষ্ট হয়ে গেল। এখন সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে, তাহলে কোনোরকমে উঠে দাঁড়াতে পারব। নয়তো আমাদের মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

ব্যবসায়ী মামুন, হেলাল খানের মতো হাজারও ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে গেছে আগুনে। তাদের মতো সবাই মার্কেটের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের সীমনাপ্রচীর ঘেঁষা সড়কের ফুটপাতে বসে কান্না করছিলেন। কেউ কেউ আগুন লাগার ঘটনা মোবাইল ফোনে পরিবার-পরিজনকে জানাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী কাদঁতে-কাদঁতে মোবাইল ফোনে বলছিলেন, সবার সবকিছু দেখা হয়ে গেছে। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস আইছে, নৌ বাহিনী আইছে, পুলিশ, র‌্যাব সব আইছে; কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এখন আল্লাহর দিকে চাইয়া আছি। আল্লাহ বৃষ্টি দিক। রহম দিয়া সবকিছু ঠান্ডা করে দিক। আর কিছু চাই না। কিছুই চাওয়ার নাই। আমাগো সবকিছু শেষ হইয়া গেছে।

dhakapost

এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘সামনে ঈদ। ছাওয়াল-পাওয়ালদের কতকিছু কিনে দেব বলে কথা দিছিলাম। এখন আমাগো সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ রহম না করলে আর কিছুতেই কিছু করা যাবে না।’

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মতো কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে অনেক কর্মচারীকেও। তারা বলছেন, মালিকদের কাছে তো গত কয়েক রোজার বেচা-বিক্রির কিছু টাকা হলেও আছে। সেটা দিয়ে কিছুদিন হলেও চলতে পারবে। কিন্তু যারা কর্মচারী তাদের হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই। তারা কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলবে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলের পাশে ফুটপাতে কথা হয় শিল্পী ফ্যাশন নামে একটি দোকানের কর্মচারী জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটগুলোতে লাখের ওপরে কর্মচারী রয়েছে। অধিকাংশ দোকানের কর্মচারী গত মাসের বেতনও পায়নি। এর মধ্যে আগুনে সব পুড়ে গেছে। এখন মালিক কবে গত মাসের বেতন দেবে সেটাও জানি না। আর ঈদের আগে মার্কেট ঠিক করা সম্ভব হবে কি না, দোকান আবার খুলবে কি না সেটাও জানি না। এই অবস্থায় আমরা কীভাবে ঈদ করব বলেন। কীভাবে ঘর ভাড়া দেব, কীভাবে ছেলে-মেয়ে, মা-বাপেরে টাকা পাঠামু?

জাকিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি দোকানের কর্মচারী হেলাল বলেন, মালিকরা তো আগুনের ঘটনা দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করবে। কিন্তু আমরা তো সেটা পারব না। মালিক বেতন না দিলে তো কিছু করার নেই। মালিক যদি বলে, আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে, কীভাবে বেতন দেবো, তখন আমরা কি করব। আবার এখন তো কোথাও চাকরিও পাব না। কিছুই মাথায় আসছে না, কী করব। কীভাবে ঈদ করব পরিবার নিয়ে?

এএইচআর/এসএম

টাইমলাইন

Link copied