পানি সমস্যা সমাধানে পবার ৮ সুপারিশ

নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ এবং সমাধানে সরকারের প্রতি ৮ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো। শনিবার (২০ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘জনস্বাস্থ্য ও স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নে নিরাপদ পানি নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনার থেকে এ সুপারিশ করা হয়।
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) ও বারসিক।
সুপারিশগুলো হচ্ছে- ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বাড়ানো এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া; খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া; সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং অবৈধ দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা ও সিএস দাগ ধরে নদীর সীমানা নির্ধারণ করা এবং নতুন করে কোনো স্থাপনা যাতে গড়ে না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখা; শিল্পকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করা; ঢাকার আশপাশের নদীসহ অন্যান্য সব নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া; নদী দূষণমুক্ত করা। নদীর পানি কৃষি ও শিল্পে এবং পরিশোধন করে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করা; নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখতে নদীতে পিলারওয়ালা ব্রিজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রিজ বা টানেল নির্মাণ করা এবং নিরাপদ পানি নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও পানি প্রবাহের প্রধান উৎসগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে নদীর পানি প্রবাহ দ্রুত হ্রাস বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এছাড়া নদীনালা, খালবিলের স্বাভাবিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, দখল, ভরাট ও সংকোচনে পানির প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক পানির আধার দ্রুত কমছে। তাছাড়া শিল্পবর্জ্য, কীট ও বালাইনাশকসহ নানা ক্যামিকেল, এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরণের দূষিত পদার্থের কারণে প্রায় সব ধরনের পানি ও এর আধারগুলো দূষিত হয়ে প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেম বিনষ্ট ও মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
তারা আরও বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট-বড় ৪০৫টি নদী। যার মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। এছাড়া বছরে ১.২ থেকে ২.৪ বিলিয়ন টন পলি নদীবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। পলি পড়ে নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নদীগুলো দখল, ভরাট ও দূষণের শিকার। ফলে নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে, নৌ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
বক্তারা বলেন, আমাদের নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নদীর তলদেশে জমে থাকা পলি অপসারণ অপরিহার্য। এ পলি অপসারণের জন্য প্রয়োজন ড্রেজিং। দীর্ঘ নদীপথ ড্রেজিং অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বর্তমানে যে হারে ড্রেজিং হচ্ছে তাতে কোনোভাবেই নদীগুলো সজীব ও সচল করা সম্ভব নয়। শুকনো মৌসুমে আমাদের অনেক নদী শুকিয়ে যায়। এসব নদী শারীরিকভাবে খনন করা যেতে পারে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বানিপা’র সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ, পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বানিপা’র সভাপতি প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন, বারসিকের সমন্বয়ক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মাহবুব সৈয়দ, বাংলাদেশ নদী রক্ষা বাস্তবায়ন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক শাকিল রেহমান, নাসফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুস্তফা ইকবাল চৌধুরী, সুজনের ঢাকা মহানগরের সহ সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও পরিবেশ কর্মী আবুল হাসনাত চুন্নু প্রমুখ।
এমএইচএন/এইচকে