মায়ের ফোনে মন মানছিল না, ব্যাগ গুছিয়ে গাবতলীতে ওসমান

ঢাকার একটি বিনোদন কেন্দ্রে চাকরি করেন ওসমান। বাড়ি পাবনার চাটমোহরে। অফিসের কারণে ঈদের আগে বাড়ি যেতে পারেননি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকাতেই ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে তাকে।
ঈদের দিন পেরিয়ে গেলেও মায়ের ফোনে আর মন মানেনি ওসমানের। দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে গাবতলী বাস টার্মিনালে চলে আসেন তিনি। এরপর এখান থেকে টিকিট কেটে বাসে চড়ে সোজা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
বাসে ওঠার আগে ওসমান বলছিলেন, ‘মায়ের মন খারাপ, স্ত্রী ফোন ধরছিল না, সকালে মায়ের ফোন বাড়ি আসতে হবে। আমারও মন মানছিল না। টাই ব্যাগ গুছিয়ে সরাসরি গাবতলী বাস কাউন্টারে চলে এলাম। শাহজাদপুর ট্রাভেলসে উঠে বাড়ি যাব। এখন ফুরফুরে লাগছে।’

শুধু ওসমান নয়, চাঁদরাতে যারা কোনো কারণে বাড়ি যেতে পারেননি কিংবা বাসের টিকিট পাননি, তাদেরই ভিড় জমেছে টেকনিক্যাল, মাজার রোড ও গাবতলী আন্তঃজেলা বাস কাউন্টারে।
সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড়।

যাত্রী ও বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ গ্রামে ফিরছেন নাড়ির টানে, কেউ স্ত্রী-সন্তান ও মায়ের মান ভাঙাতে। কেউ যাচ্ছেন শ্বশুরবাড়িতে, কেউ ঘুরতে যাচ্ছেন আত্মীয়ের বাসায়।
পাবনা এক্সপ্রেস কাউন্টারে কথা হয় আব্দুল ওয়াহেদ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকা গিয়েছিলাম। ওদের নিয়ে গতকাল ঈদের দিন বিকেলে ঘুরেছি। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, নিজের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন আসতেছে বারবার দুদিনের জন্য হলেও যেন বাড়িতে ঘুরে আসি। দুই সন্তানও কান্নাকাটি করছিল, তাই অনেকটা উপায় না পেয়ে বাড়ি যাচ্ছি।

কুয়াকাটায় একটি রিসোর্টে চাকরি করেন সবুজ মিয়া। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান গেছে শ্বশুরবাড়ি জয়পুরহাটে। ঈদের দিন স্ত্রী-সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকা সত্যি কষ্টকর। ভালো লাগছিল না, ওরাও বারবার বাড়ি আসার জন্য তাগাদা ছিল। ভোরে একটি বাসে ঢাকায় এসেছি, এখন শাহ ফতেহ আলী ট্রাভেলসের একটি বাসে জয়পুরহাটে শ্বশুরবাড়িতে যাব।
শাহজাদপুর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা সাগর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁদরাতেও এতো ভিড় ছিল না কাউন্টারে। আজ সকাল থেকে অনেক যাত্রী কাউন্টারে বের করছেন। যাদের কেউ আগে হয়তো যাবার সিদ্ধান্ত নেননি, কেউ হয়তো পাননি গন্তব্যের টিকিট। সকাল থেকে পাবনা, শাহজাদপুর ও চাটমোহর রুটে বাস ভর্তি ৬ ট্রিপ ছেড়ে গেছে। সারাদিনে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আমাদের অন্তত আরও আটটি ট্রিপ ছেড়ে যাবে।

শাহ ফতেহ আলী বাসের টিকিট বিক্রেতা তুহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে আমাদের পাঁচটি ট্রিপ নওগাঁ, জয়পুরহাট ও রংপুরে ছেড়ে গেছে। অনেক যাত্রী পাচ্ছি। এমনটা আগে কখনো দেখিনি।
গাবতলী শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের কাউন্টারে কথা হয় তাবারুল ইসলাম নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাইবান্ধা যাচ্ছি নিজের বাড়িতে। পাশাপাশি খালার বাড়ি শ্বশুরবাড়ি হওয়ায় এক ঈদ যাত্রায় সবার সঙ্গে দেখা হবে। ঈদের দ্বিতীয় দিন হলেও আজকে ফিরব। সবার সঙ্গে দেখা হবে, এতেই ভালো লাগছে।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনে সাধারণত কম-বেশি যাত্রী ভিড় করেন কাউন্টারে। তাদের কথা বিবেচনা করে সব কাউন্টারে মোটামুটি আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেম কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে।
জেইউ/কেএ