পরিবারকে ভালো টাকা পাঠাতে পারব, তাই ঈদে বাড়ি যাইনি

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এসময় সবাই চেষ্টা করে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। সেজন্য শত কষ্ট ও ভিড়ের মধ্যে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। কিন্তু রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে এটি ব্যতিক্রম। পরিবারকে ভাল রাখতে তারা বাড়িতে ঈদ করা বিসর্জন করেন। বাড়তি কিছু রুজি ও বকশিসের আশায় ঈদের দিন ও পরের ছুটির দিনগুলোতে তারা কাজ করেন।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দার রিকশাচালক সুলতান মিয়া। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় রিকশা চালান তিনি। খেটে খাওয়া এ মানুষ জানান, বাড়ি যেতে তো মন চায়। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের ভাল রাখতেই ঈদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে রিকশা চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঈদের সময় বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে যাওয়া হয়নি। ঈদের সময় রাস্তা ফাঁকা থাকে। এসময় যানজট কম থাকে, তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছা যায়, ভাড়াও বেশি, অনেকেই খুশি হয়ে বকশিসও দেয়। সব মিলিয়ে ঈদের মধ্যে রিকশা চালিয়ে আনন্দ পান তিনি।
পাশেই ছিলেন জামালপুরের রিকশাচালক কবির। তিনি জানান, ঈদের মধ্যে সন্তানদের জন্য মন কান্দে। কিন্তু কি করমু। পাঁচজনের সংসারের তিনিই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারের একদিন কাজ না করলে পরিবারের সদস্যরা কষ্ট করবে। তাই ঈদে বাড়ি যায়নি।

তিনি বলেন, ঈদে বাড়তি কিছু রুজি হয়, এটিা দিয়ে বাচ্চাদের কাপড় কিনে দেয়।
ফার্মগেট হলিক্রস কলেজের পাশে বসে আছেন রমিজ উদ্দিন। তিনি কাজ করেন দৈনিক ভিত্তিতে। ঈদে বাড়ি যাননি কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদে সবাই বাড়ি যায়। ঢাকায় বাসা-বাড়িতে কাজ করার লোক পাওয়া যায় না। এ সময় থাকলে কিছু অতিরিক্ত টাকা পাওয়া যায়। তাই বাড়িতে যায়নি।
রাজধানীতে নিম্নবিত্তের হাজারো মানুষ ঈদের আনন্দকে বিসর্জন দিয়ে ঢাকায় কাজ করছেন। তাদের একজন কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার বাসিন্দা আকন্দ। তিনি কারওয়ান বাজার এলাকায় ভ্যান দিয়ে কাঁচামাল টানেন। শুধু ঈদে বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ি যায়নি। দুইদিন পর তিনি বাড়িতে যাবেন। কারণ হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তাই একদিনও যাতে অপচয় না হয় সেজন্য ঈদের মধ্যে ভ্যান চালাচ্ছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি দুই বছর ধরে গাড়ির কাঁচামাল নামাই। এখন গাড়ি আসে কম আর আমরা লেবার বেশি। তারপরও মাশাল্লাহ ভাল রুজি হয়। দিনের হাফবেলা ভ্যান চালায় বাকি সময় একটি বাসায় কনস্ট্রাকশনের কাজ করি।
এনএম/এমজে