রিকশাচালক মানিকের মৃত্যু, হাসপাতালের সেবা নিয়ে প্রশ্ন

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০১ পিএম


রিকশাচালক মানিকের মৃত্যু, হাসপাতালের সেবা নিয়ে প্রশ্ন

রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান রিকশাচালক মো. মানিক হোসেন (৩৩)। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাননি। অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে এবং এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যাখ্যা প্রদান করতে বলেছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।

পাশাপাশি দেশের কতটি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সমৃদ্ধ চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছ — তা উল্লেখপূর্বক একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।সেখানে বলা হয়েছে, “আইসিইউর জন্য ‘লড়াই’ বাঁচেননি মানিক”— শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পবিত্র ঈদুল ফিতরের তিন দিন পর অর্থাৎ গত ২৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) রাজধানীতে ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতির মোটরসাইকেলের চাপায় গুরুতর আহত হন রিকশাচালক মো. মানিক হোসেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে মানিককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসক জানান, আহত মানিককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই।

ওই সময় এক অ্যাম্বুলেন্সের চালক উপযাজক হয়ে বলেন, তিনি এক হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারবেন, সেখানে আইসিইউ শয্যা খালি আছে । চালকের কথা মতো ছেলেকে নিয়ে শান্তিবাগে ‘বিএনকে হসপিটাল লিমিটেড’ নামে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান পিতা শাহীন মৃধা।

স্বজনদের অভিযোগ, মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন ওই হাসপাতালে মানিক থাকলেও সেখানে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। অতঃপর নারী উদ্যোক্তা জনৈক তাসলিমা মিজির চেষ্টায় বিএনকে হসপিটাল লিমিটেডের ৭১ হাজার টাকা বিল পরিশোধ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে একটি শয্যার ব্যবস্থা হয়। তবুও মানিককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গত ২৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাত ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বার্তায় মানবাধিকার কমিশন বলছে, গুরুতর রোগীর প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে প্রতি সেকেন্ড যেখানে মহামূল্যবান, সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ভুক্তভোগী মানিককে নিয়ে ঘুরেছেন স্বজনেরা। যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। কমিশন মনে করে, কোনো মানুষই যেন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে, সে বিষয়ে স্বস্তিদায়ক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মৃত্যুবরণকারী মানিকের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা, হাসপাতালের পক্ষে তাকে জরুরি কোনো সেবা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার অন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব ছিল কি না — সে বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যাখ্যা প্রদান এবং দেশে কতটি সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সমৃদ্ধ চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে কী ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা উল্লেখপূর্বক একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণের জন্য সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।

জেইউ/এসকেডি

Link copied