চট্টগ্রামের উপকূলীয় ৬ থানায় চুরি-ডাকাতি বন্ধে পুলিশের নজরদারি
ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এবং নিরাপদে লোকজনকে আশ্রয় নিতে প্রচারণা চালাচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। বিশেষ করে এই ইউনিটের আওতাধীন ৬টি উপকূলীয় থানায় ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছে পুলিশ।
এছাড়া জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে একটি জরুরি সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) কবীর আহমদকে। জেলার আওতাধীন লোকজনকে জরুরি সেবার জন্য ০১৩২০-১০৭৪০২, ০১৩২০-১০৮৩৯৮, ০১৩২০-১০৮৩৯৯ ও ০২-৪১৩৫৫৫৪৯ এই চারটি নম্বরে যোগাযোগ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এসব নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার সকাল থেকে মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। কেউ সমস্যায় পড়লে থানা অথবা জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোন দেবেন। না হয় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলেও হবে। আমাদের টিম উদ্ধার তৎপরতা, জনসাধারণের চিকিৎসা সেবাসহ যেকোনো জরুরি সেবা দিতে তৎপর থাকবে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস থেকে জানা যায়, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটার পর্যন্ত) বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
একারণে চট্টগ্রাম নগরের ২৬ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসরত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরাতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। শনিবার নগরের আকবর শাহ থানার ফয়েজ লেক সংলগ্ন ১ নম্বর ঝিল, ২ নম্বর ঝিল, ৩ নম্বর ঝিল, শান্তিনগর এলাকা, খুলশী থানার লালখান বাজারের মতিঝরনা, বাটালি হিল, পোড়াকলোনি পাহাড়, চান্দগাঁও থানার আমিন জুট মিলস পাহাড়, টাংকির পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, বার্মা কলোনিসহ পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জন। জেলায় ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা আবহাওয়ার বার্তা প্রচার করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম প্রস্তুতও রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এরইমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। লোকজন নিরাপদের স্থানান্তর করতে আমি নিজে শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত ঘরে ঘরে গিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে এরইমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ কার্য হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে ও জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা পুলিশের ১৭টি থানায় দায়িত্বরত এবং ব্যাকআপ হিসেবে মোট ২ হাজার পুলিশ সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলায় মোট ২৫০ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ আছে। তার মধ্যে ১২ দশমিক ৭ কিলোমিটার ছাড়া বাকি অংশ সুরক্ষিত আছে। জেলায় দুটি সিএসডি এবং ১৬টি এলএসডি রয়েছে। মজুত করা খাদ্যশস্যের সুরক্ষার জন্য কর্মরত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। গুদামের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ ঠেকাতে বাফেল ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে শনিবার ভোর থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে তা পরিমাণে খুবই কম। আকাশ মেঘলা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। জেটি থেকে বড় জাহাজ বের করে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে লাইটার জাহাজকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতু এলাকায় নিরাপদে অবস্থান নিতে বলা হয়। এছাড়া শনিবার ভোর ৬টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রোববার রাত ১২টা পর্যন্ত প্লেন ওঠানামা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এমআর/জেডএস