নাতি-নাতনিকে নিজের হেফাজতে রাখতে চান বাবুল আক্তারের শ্বশুর

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে নিজের হেফাজতে রাখার আবেদন করেছেন তাদের নানা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৬ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে আবেদনটির শুনানি হয়। তবে এর আদেশ অপেক্ষমাণ রয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিতু-বাবুলের দুই সন্তান কেন নানার কাছে থাকবে এর পক্ষে আদালতে আমরা যুক্তি তুলে ধরেছি। দুই সন্তানের মা মারা গেছে, তাদের বাবা কারাগারে। এছাড়া দাদিও মারা গেছে, দাদা পঙ্গু। সব মিলিয়ে ছেলে-মেয়েদের দেখার মতো আপনজন কেউ নেই। বর্তমানে সন্তানরা সৎ মায়ের সঙ্গে রয়েছে। সেখানে তারা একবেলা খাচ্ছে, একবেলা খাচ্ছে না। তারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। এ কারণে সৎ মায়ের ওপর আস্থা রাখা যায় না। এর চেয়ে সন্তানরা নানা-নানির কাছে বেশি নিরাপদ। তাই তাদেরকে নানা-নানির হেফাজতে রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে, মঙ্গলবার মিতু হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী মোশাররফ হোসেনকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা। এদিনের জেরার বিষয়ে মহানগর পিপি আবদুর রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভিনদেশি নারী গায়ত্রীর সঙ্গে কীভাবে কথা হয়েছিল, কখন ডায়েরি পাওয়া গেছে, মোশাররফ হোসেন ডায়েরির লেখা চেনেন কিনা এসব বিষয়ে জেরা করা হয়। বাবুলের আইনজীবীর বক্তব্য হলো- তদন্ত সংস্থা পিবিআই মোশাররফ হোসেনকে এসব শিখিয়ে দিয়েছেন এবং সরবরাহ করেছেন। তবে মোশাররফ হোসেন এসব বিষয় নাকচ করেছেন।
এর আগে দুই দফা সাক্ষ্য দেওয়ার সময় মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, বাবুলের সঙ্গে ভিনদেশি নারী গায়ত্রীর সম্পর্ক ছিল। এটি জেনে যায় মিতু। এরপর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। সব মিলিয়ে পরকীয়ার কারণে স্ত্রী মিতুকে খুন করান বাবুল। বাবুলের বিশ্বস্ত সোর্স মুসা এই হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। হত্যার পর সাইফুল নামে এক প্রেসের মালিক থেকে তিন লাখ টাকা মুসাকে দেন বাবুল।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওই দিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।
এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
এমআর/এমজেইউ