কার্যকরী পদক্ষেপ-সচেতনতা না বাড়ালে সাইবার জগতে ঝুঁকি আরও বাড়বে

Dhaka Post Desk

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২০ মে ২০২৩, ০৪:২৫ পিএম


কার্যকরী পদক্ষেপ-সচেতনতা না বাড়ালে সাইবার জগতে ঝুঁকি আরও বাড়বে

সাইবার জগৎ যেমন আলো ও জ্ঞানের পথ দেখায়, তেমনি আছে হয়রানি, ভোগান্তি ও নিরাপত্তার ঝুঁকি। সাইবার জগতে পদচারণা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি। এখান থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। একইসঙ্গে দরকার নিজস্ব ডেটা সেন্টার এবং নিয়ন্ত্রণে নেই এমন প্রতিষ্ঠানে তথ্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার অপরাধ বিরোধী নানা পদক্ষেপ।

শনিবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৩’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। সাইবার স্পেস নিয়ে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা বলেন, সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ দিন দিন বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। সঙ্গে বাড়বে ঝুঁকিও। সবাই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে আছি।

তিনি বলেন, চীনসহ অনেক দেশই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর অনুমতি দেয়। আমাদেরও সেরকম করা উচিত। কিন্তু আমাদের হচ্ছে উল্টো। আমরা আগে অনুমতি দিই এবং ঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণের পথ দেখি। অপরাধ ঘটার আগে সেটা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, করোনার আগে সাইবার জগতে মানুষের সম্পৃক্ততা যত ছিল, করোনার সময় থেকে এখন‌ পর্যন্ত দ্বিগুণ বেড়েছে। এর নানা কারণ রয়েছে। একজন ব্যক্তি কোনো একটি কাজ করতে গেলে সেটা যদি অফলাইনে করতে হয় তখন তাকে সরাসরি যেতে হয়, লোক খুঁজতে হয়। আবার সেটা হারিয়ে যায় কি না বা কোনো সমস্যা হয় কি না বা কাজটা যথাযথ হবে কি না সেটা ভাবতে হয়। আর অনলাইনে করলে সেটা করার জন্য তাকে আর কোথাও যেতে হয় না। আবার একটা ডকুমেন্ট সে রাখতে পারছে।

আরও পড়ুন : কমেছে অভিযোগের প্রবণতা, ঝুঁকি বেড়েছে নারী-শিশুর

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বও সাইবার জগতে নিজেদের শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করছে। এমনকি সাইবার বিষয় নিয়েই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধও প্রভাবিত হয়েছে। তাই সাইবার জগতটা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কেন যান না, তা একটি বড় প্রশ্ন। ধর্ষণের বিষয়েই যদি বলি, নানা ধরনের প্রমাণ একজন নারীকে দিতে হয়। আলামত নষ্ট হয়ে গেলে সেটা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ১৮ বছরের নিচে বাচ্চাদের কাছেও এখন যেভাবে মোবাইল পৌঁছে গেছে, তাদের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে পরিবার থেকেই।

রাশেদা রওনক খান বলেন, নানা কারণে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে মিশতে হবে। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে এলে যোগাযোগ হচ্ছে। আবার যখনই শেষ হয়ে যায় আর যোগাযোগ নেই। এই বিচ্ছিন্নতার কারণে আত্মহত্যাও করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছে। অথচ তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিল। কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন, একাকিত্বে ও নিঃসঙ্গতায় ভুগে আত্মহত্যা করেছে।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, নিজেদের তৈরি নয়, আমরা অজানা জায়গা থেকে আসা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। তাছাড়া সাইবার দুনিয়াটা পুরোটাই ধোঁয়াশায় পূর্ণ। এর মধ্যে এসেছে চ্যাটজিপির বিষয়টি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত বলেন, গবেষণার মাধ্যমেই সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার হয়। সংখ্যাভিত্তিক গবেষণা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এলাকা, পেশা, অবস্থান ইত্যাদি বিষয় প্রকাশের পরামর্শ দেন তিনি। একইসঙ্গে তাদের স্টোরিগুলো তুলে আনার আহ্বান জানান। ভুক্তভোগীদের মধ্যে শিশু ও তরুণদের হার মোটেই নেগলিজেবল নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, মাল্টিস্টেক কমিউনিটি অ্যাপ্রোচে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

জেইউ/এসএসএইচ/

Link copied