পাম্প হাউস নির্মাণে বর্গমিটারে ব্যয় ২ লাখ টাকা!

দুটি ডিপ টিউবওয়েলের (গভীর নলকূপ) ১১১ বর্গমিটার পাম্প হাউস নির্মাণে ব্যয় হবে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হচ্ছে দুই লাখ আট হাজার ৮১ টাকা। এক হাজার আট মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যয় হবে নয় কোটি ৩২ লাখ টাকা। এ খাতেও প্রতি বর্গমিটার সীমানা প্রাচীরে ব্যয় হবে ৯২ হাজার ৪৬০ টাকা। ছয় হাজার ৩৮২ বর্গমিটার পুকুর ও ঘাটলা নির্মাণে প্রায় ছয় কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে, যা প্রতি বর্গমিটার হিসাবে নয় হাজার ৬০৩ টাকা। এ ব্যয় অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
গত ১৬ মার্চ একনেক সভায় ‘বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পে এমন ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রকল্পটি অনুমোদনের আগেই বাস্তবায়ন মেয়াদ এক বছর নয় মাস শেষ হয়েছে।
১০০০ মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ব্যয় হবে সাড়ে নয় কোটি টাকা। ৬৮৮ বর্গমিটার মসজিদ নির্মাণে লাগবে সাড়ে তিন কোটি টাকা। ছয় হাজার ৩৮২ বর্গমিটার পুকুর ও ঘাটলা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় কোটি ১৩ লাখ টাকা
কোন খাতে কত ব্যয়
১. একনেকে অনুমোদিত ডিপিপি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় তিন হাজার ২৭০ বর্গমিটার সুইমিংপুল নির্মাণ হবে। এটি নির্মাণে ২১ কোটি ৬২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হচ্ছে ৬৬ হাজার ১৩৪ টাকা।
২. পাঁচ হাজার ৪৫২ বর্গমিটার ড্রেসিংরুম ও গ্যালারিসহ জিমনেশিয়াম নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হবে ৬৫ হাজার ৩৫১ টাকা।
৩. একটি ৬৮৮ বর্গমিটার মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৪১ লাখ টাকা। প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হবে ৪৯ হাজার ৫৯৩ টাকা।
৪. ১০ হাজার ৫১২ বর্গমিটার ডরমিটরি ও হোস্টেল ব্লক নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হবে ৪১ হাজার ৮৪৩ টাকা।
৫. শিশুদের একটি খেলার মাঠ নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
৬. তিন হাজার ২৫২ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা (যানবাহন) তৈরিতে ব্যয় হবে এক কোটি ৭৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। প্রতি বর্গমিটারে খরচ হবে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা।
৭. এক হাজার ৩৯৪ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ পথচারী রাস্তা নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বর্গমিটারপ্রতি ১৮ হাজার টাকা খরচ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
৮. ছয় হাজার ৩৮২ বর্গমিটারের পুকুর ও ঘাটলা নির্মাণ করা হবে। এ খাতে ব্যয় হবে ছয় কোটি ১৩ লাখ টাকা। এখানেও প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হবে নয় হাজার ৬০৩ টাকা।
৯. দুটি গেট নির্মাণে ব্যয় হবে দুই কোটি টাকা।
১০. ২৭ হাজার ৮১১ বর্গমিটার একাডেমিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মাণে ১৪৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রতি বর্গমিটারে ব্যয় হবে ৫১ হাজার ৯৬২ টাকা।
প্রকল্পটা অনেক আগের। খুব বেশিদিন হয়নি আমি এখানে যোগ দিয়েছি। আর প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছে গণপূর্ত অধিদফতর। তাই এ বিষয়ে গণপূর্তই ভালোভাবে বলতে পারবে
মো. আনিছুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, প্রকল্পটির ওপর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভা অনুষ্ঠানের পর পুনর্গঠন ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে তোলা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী তৃতীয় বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। এই বিপুল জনগোষ্ঠীরও অধিকার রয়েছে উন্নয়নের মূলধারায় অংশগ্রহণের। তাদের বাদ দিয়ে কোনো জাতির পক্ষেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
‘প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কর্মসূচি’র মাধ্যমে জানা গেছে, সারাদেশে ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি রয়েছেন। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত সেবা, সুযোগ বা বিনোদনমূলক সুবিধা নেই। তাদের জন্য যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো, শিক্ষা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায় তবে তারা উন্নয়নের মূলধারায় অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মানবসম্পদে পরিণত করা গেলে তারা আর সমাজের বোঝা হিসেবে থাকবে না। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য প্রস্তাবিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ জরুরি।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আনিছুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রকল্পটা অনেক আগের। খুব বেশিদিন হয়নি আমি এখানে যোগ দিয়েছি। আর প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করেছে গণপূর্ত অধিদফতর। তাই এ বিষয়ে গণপূর্তই ভালোভাবে বলতে পারবে।’
প্রকল্পটির বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারব না। কারণ, আমার সামনে কোনো পেপারস নেই। প্রকল্পটি আমার আগের সদস্য ফাইনাল করে গেছেন। ফলে এ পর্যায়ে আমার কিছু বলার নেই
মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম, সদস্য, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ, পরিকল্পনা কমিশন
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের কাজটি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিদেশি কোম্পানি করতে চেয়েছিল। ফলে এটি দীর্ঘদিন পড়ে ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রী থ্রিডি এনিমেশনসহ তার কার্যালয়ে বিষয়টি দেখেছেন। দেখার পরই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে এসে প্রকল্পে কী কম হয়েছে বা কী বেশি হয়েছে— সেটা বলতে পারছি না। আমি এটা দেখি নাই।’
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রকল্পটির বিষয়ে আমি এখন কিছু বলতে পারব না। কারণ, আমার সামনে কোনো পেপারস নেই। প্রকল্পটি আমার আগের সদস্য ফাইনাল করে গেছেন। ফলে এ পর্যায়ে আমার কিছু বলার নেই।’
এসআর/এইচকে/এমএআর