রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

‘জাপান বাংলাদেশ মৈত্রী: ঢাকা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্য পথ ও উপায়’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২ মে) নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সংলগ্ন সভাকক্ষে এ বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি (আইআইএলডি)।
এ গোল টেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভসের সদস্য ওসোমু ওনো এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা (নির্বাহী প্রকৌশলী) ড. মো. শফীউল্লাহ ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. ইফতিখার আহমাদ চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. রুহুল আমিনের মডারেশনে বৈঠকে মূলবক্তব্য প্রদান করেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির (আইআইএলডি) নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহীন। এছাড়াও বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. তাওহীদুল ইসলাম ও গবেষক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওসোমু ওনো বলেন, আমরা বাংলাদেশের শহরগুলোর, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা জেনেছি। এ প্রেক্ষিতে, আমরা প্রথমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং এরপর 'বর্জ্য থেকে শক্তি' এই পদ্ধতিকে কেন্দ্র করে কাজ করতে আগ্রহী। এ পদ্ধতিতে বার্নিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। যা বর্জ্য সেপারেশন করে প্রয়োজনীয় অংশ জ্বালানির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এক্ষেত্রে কঠিন বর্জ্য পদার্থ পুড়িয়ে এর পরিমাণ কমিয়ে তাপ, বাষ্প এবং বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে শহর পরিবেশ দূষণ থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে এবং উৎপাদিত বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহার করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। যদি সিটি কর্পোরেশন এদিকে আগ্রহ দেখায় তাহলে আমরা এগিয়ে আসতে পারি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ড. মো. শফীউল্লাহ ও মো. ইফতিখার আহমাদ চৌধুরী তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক কর্মসূচি বা প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওসোমু ওনোকে অবহিত করেন। তারা জানান, ইতোমধ্যেই জাইকার সহযোগিতায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দুটি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে। এ অনুযায়ী জনসচেতনতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ছিল এ পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি।
এ সময় তারা ওসোমু ওনোর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তাদের কর্মপদ্ধতির মডেলসহ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবনা প্রদানের আহ্বান জানান এবং শহরের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতিও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকের মডারেটর অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ঢাকা নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যদি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তাহলে শহুরে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। আর জাপান যদি আমাদের সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কাজ করে তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থায়নের বিষয়টিও সহজ হবে।
আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম শাহীন বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সম্ভাব্য শক্তি সমাধান ইস্যুটি আমাদের আধুনিক বিশ্বে রীতিমতো উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবজাতির ইতিহাসে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম যখন ছিল এবং যখন প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার বেশি ছিল তখন বর্জ্য পদার্থের বৃদ্ধিও তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যাই হোক শিল্পায়ন এবং নগরায়নের সঙ্গে বর্জ্যের পরিমাণ এবং জটিলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবেশগত স্থায়িত্ব এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এইচআর/এমএ